মোহাম্মদ মাসুদ বিশেষ প্রতিনিধি
বাংলাদেশের একমাত্র রেকর্ড পরিমাণ দান বাক্সের টাকার
শীর্ষ মসজিদ হিসেবে সারা দেশের শীর্ষ আলোচিত আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও যার পরিচিতি কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ।এবার আটটি লোহার দানবাক্স ৩ মাস ১৩ দিন পর আজ শনিবার সকালে খোলা হয়। দানবাক্স থেকে মেলে ২৩ বস্তা টাকা। কাকিনা আগের অর্ধেক সময়ের দান করা অর্থ।
সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দিনভর গণনার পর রাত ৯টা ১০ মিনিটের দিকে গণনা শেষে টাকার ৫ কোটি ৭৮ লাখ ৯ হাজার ৩২৫ টাকা। যা অতীতের সকল রেকর্ডকে হার মানিয়েছে। এর আগে গত ৬ মে পাগলা মসজিদের দানবাক্স থেকে পাওয়া যায় ৫ কোটি ৫৯ লাখ ৭ হাজার ৬৮৯ টাকা।
দানবাক্স থেকে পাওয়া গেছে।
দানবাক্সে পাওয়া টাকা গণনা করছে মসজিদ মাদ্রাসার ছাত্র ও রূপালী ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। দানবাক্সে পাওয়া টাকা গণনা করছে মসজিদ মাদ্রাসার ছাত্র ও রূপালী ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
দানবাক্সগুলো খুলে ২৩টি বস্তায় ভরে টাকাগুলো মসজিদের দোতলায় নেওয়া হয় গণনার জন্য। সারা দিনে এগুলো গণনা করে পাওয়া যায় ৫ কোটি ৭৮ লাখ ৯ হাজার ৩২৫ টাকা।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখের উপস্থিতিতে দানবাক্স কমিটির আহ্বায়ক ও কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মহুয়া মমতাজের তত্ত্বাবধানে দানবাক্সগুলো খোলা হয়।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এ টি এম ফরহাদ চৌধুরী বলেন, টাকার পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালংকারও পাওয়া গেছে। টাকাগুলো রূপালী ব্যাংকে জমা করা হয়েছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এ টি এম ফরহাদ চৌধুরী,
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মহুয়া মমতাজ,সিনিয়র সহকারী কমিশনার শেখ জাবের আহমেদ,সহকারী কমিশনার নাবিলা ফেরদৌস,রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম)সুশান্ত সিংহ মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি খলিলুর রহমান ও রফিকুল ইসলামসহ মসজিদ কমপ্লেক্সে অবস্থিত মাদ্রাসা ও এতিমখানার শিক্ষকবৃন্দ
ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা গণনাকাজ তত্ত্বাবধান করেন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ২০ জন সদস্য নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে রূপালী ব্যাংকের ৬০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলিয়ে মোট ১৯৮ জন মানুষ মসজিদ মাদ্রাসার ১৩৮ জন ছাত্র টাকা গণনা সম্পূর্ণ করেছেন।
উপস্থিত অনেকে সচেতন সাধারণ বলেছেন,স্বচ্ছতার স্বার্থে আয়ের পাশাপাশি মসজিদের টাকা-পয়সা ব্যয়ের হিসাবটাও জনসম্মুখে নিয়মিত প্রকাশ করা উচিত। প্রতিবারের মতো টাকা গণনা দেখতে শহরের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ মসজিদে ছুটে আসেন।
মসজিদ পরিচালনা কমিটি জানায়, এখানে দান করলে মনোবাসনা পূরণ হয়,এমন বিশ্বাস থেকে তাঁরা ছুটে আসেন। এ মসজিদের দানবাক্সে যে বিপুল পরিমাণ টাকা পাওয়া যায়, তা জেলার আর কোনো মসজিদে পাওয়া যায় না।
মুসলমানসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজন এ মসজিদে দান করেন।
শুধু নগদ টাকা নয়, টাকার সঙ্গে সোনা-রুপার অলংকারসহ বিদেশি মুদ্রাও পাওয়া যায় । তা ছাড়া প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক ফলফলাদি, মোমবাতি ও ধর্মীয় বই,গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি,
দান করে থাকে।
পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শওকত উদ্দীন ভূঞা বলেন,মসজিদের নিলামঘরে প্রতিদিন মানুষ নানা ধরনের জিনিসপত্র দান করেন। নিলামঘরে প্রতিদিন এসব নিলামে বিক্রি করা যা কিনা দানসিন্দুকে দানের বাহিরে।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ বলেন-আমার সঙ্গে আমার পুলিশ সদস্যরা ছিল, আনসার সদস্যরাও ছিল। নিরাপত্তার সঙ্গে এখানকার টাকা গণনা শেষ করে ব্যাংকে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসকসহ আমরা কমিটির সদস্যরা এখানে ছিলাম। পুলিশ যে নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দেয় তার প্রমাণ সকাল থেকে আমি এখানে।
এই এলাকার মানুষেরা চান এখানে একটা দৃষ্টিনন্দন মসজিদ কমপ্লেক্স হোক। সুন্দর মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণ করতে পরামর্শক নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্তের পথে।
নিয়োগ চূড়ান্ত হলেই আমরা মসজিদের কাজে হাত দেব।
এছাড়াও ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের প্রতি সারা দেশের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের অন্যরকম আবেগ রয়েছে।
এখানকার মানুষের ইচ্ছা এই মসজিদে কমপক্ষে ৩০ হাজার মানুষ যেন নামাজ পড়তে পারে। আমরাও সেরকমটি চাই।’জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ ঐতিহাসিক মসজিদ সম্পর্কে এসব কথা বলেন।
উল্লেখ্য: জেলা শহরের পশ্চিম প্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে হারুয়া এলাকায় অবস্থিত পাগলা মসজিদটি প্রথমে ১০ শতক জায়গায় প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরে এর আয়তন আরও বাড়ানো হয়েছে। মসজিটি এখন প্রায় চার একর জায়গাজুড়ে রয়েছে। সুউচ্চ মিনার ও তিন গম্বুজবিশিষ্ট তিনতলা বিশাল পাগলা মসজিদ কিশোরগঞ্জের অন্যতম ঐতিহাসিক স্থাপনা।
অনেক সময় অলৌকিক চাওয়া পাওয়া অভিজ্ঞতাই লেখা আবেগ অনুভূতি প্রকাশ করে দান সিন্দুকে দানকারী অনেকেই। অবাক আশ্চর্যের আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায় দান বাক্সে পাওয়া চিঠিপত্রের নানা ধরনের চাওয়া পাওয়া মন্তব্য বর্ণনায়। এসব চিঠিতে লোকজন তাঁদের জীবনে পাওয়ার আনন্দ, না পাওয়ার বেদনা, আয়-উন্নতির ফরিয়াদ, চাকরির প্রত্যাশা, পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের আশা ও রোগব্যাধি থেকে মুক্তি পেতে আকুতি প্রকাশ করেন। এমনকি শত্রুকে ঘায়েলের দাবিও থাকে কোনো কোনো চিঠিতে।
Design & Developed BY: ServerSold.com
https://writingbachelorthesis.com
Leave a Reply