শাহরিয়ার শাকিল বড়লেখা প্রতিনিধিঃ
বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি, বড়লেখা মৌলভীবাজার এর আয়োজনে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি উপভোগ করে এসেছেন উপজেলার প্রায় শতাধিক শিক্ষক।
শনিবার ২৪ ফেব্রুয়ারী সকাল ৮ ঘটিকার সময় সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের দিকে যাত্রা শুরু করে বড়লেখা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমিতি। যাত্রার প্রাক্কালে অংশগ্রহণ করেন বড়লেখা উপজেলার ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসার মীর আব্দুল্লাহ আল মামুন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বড়লেখা সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি নুরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক বদরুল ইসলামসহ বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকবৃন্দ।
আঁকাবাকা রাস্তা পাহাড়ি জনপদ চারিদিকে সবুজের হাতছানি পাড়ি দিয়ে গন্তব্যস্থানে পৌঁছায় বড়লেখা সহকারী শিক্ষক সমিতি। যাত্রা পথে গান,কৌতুক, হাসি আড্ডায় ঝাঁকঝমক ভাবে ভরপুর হয়ে উঠে পুরো গাড়িগুলো।দীর্ঘ ৪ ঘন্টা জার্নির পর মাঝ পথে যাত্রা বিরতি। যাত্রা বিরতির পর জাতীয় উদ্যানে গিয়ে দুপুরের খাবারের আয়োজন করা হয়। খাবার শেষে বিভিন্ন রকম খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানটির চারিদিক ঘুরে প্রাকৃতিক অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করেন শিক্ষকরা ।
হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার রঘুনন্দন পাহাড়ে অবস্থিত এই উদ্যান । বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে সড়ক পথে এর দূরত্ব ১৩০ কিলোমিটার। উদ্যানের কাছাকাছি ৯টি চা বাগান আছে। উদ্যানের পশ্চিম দিকে সাতছড়ি চা বাগান এবং পূর্ব দিকে চাকলাপুঞ্জি চা বাগান অবস্থিত। উদ্যানের অভ্যন্তরভাগে টিপরা পাড়ায় একটি পাহাড়ী উপজাতির ২৪টি পরিবার বসবাস করে। এই ক্রান্তীয় ও মিশ্র চিরহরিৎ পাহাড়ী বনভূমি ভারতীয় উপমহাদেশ এবং ইন্দো-চীন অঞ্চলের সংযোগস্থলে অবস্থিত।সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে রয়েছে প্রায় ২০০’রও বেশি গাছপালা। এর মধ্যে শাল, সেগুন, আগর, গর্জন, চাপালিশ, পাম, মেহগনি, কৃষ্ণচূড়া, ডুমুর, জাম, জামরুল, সিধাজারুল, আওয়াল, মালেকাস, ইউক্যালিপটাস,আকাশমনি, বাঁশ, বেত-গাছ ইত্যাদি রয়েছে!
এ ছাড়াও সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে ১৯৭ প্রজাতির জীব-জন্তু রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ২৪ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ১৮ প্রজাতির সরিসৃপ, ৬ প্রজাতির উভচর। আরো আছে প্রায় ১৫০-২০০প্রজাতির পাখি। এটি বাংলাদেশের একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল এবং পাখিদের একটি অভয়াশ্রম। বনে লজ্জাবতী বানর, উল্লুক, চশমা পরা হনুমান কুলু বানর মেছো বাঘ, মায়া হরিণ ইত্যাদি; সরিসৃপের মধ্যে সাপ; পাখির মধ্যে কাও ধনেশ, বনমোরগ, লালমাথা ট্রগন, কাঠঠোকরার, ময়না, ভিমরাজ, শ্যামা, ঝুটিপাঙ্গা, শালিক, হলুদ পাখি, টিয়া প্রভৃতির আবাস রয়েছে। সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের ভিতর সাতটি ছড়া বা ঝর্না আছে যেখান থেকে এর নামকরণ করা হয়েছে সাতছড়ি। পর্যটকদের দৃষ্টি নন্দন স্থানের মধ্যে সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান একটি। এছাড়াও সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান একটি ট্রপিকেল রেইন ফরেস্ট বা মিশ্র চির সুবুজ এবং পাতাঝরা বন। ইকো ট্যুর গাইডের সাহায্য নিয়ে জীব বৈচিত্র্যে ভরপুর সাতছড়ি উদ্যানে হাইকিং করলে অপূর্ব বনশ্রী হৃদয়ে দাগ কাটবে নিঃসন্দেহে। যা নিজের চোখে এবং বাস্তবে উপভোগ না করলে বোঝা সম্ভব নয়। হাজারো পর্যটক প্রাকৃতিক দৃশ্য পরিভ্রমণে আসেন।এটির মধ্য দিয়ে পানিহীন ৭টি ছোট খাল বা ছড়া প্রবাহিত হয়েছে। উল্লেখযোগ্য বৃক্ষের মধ্যে চাপালিশ, আউয়াল, কাঁকড়া, হারগাজা, হরতকি, পাম, লটকন, আমড়া, গামার, কাউ, ডুমর ইত্যাদি। এ বৃক্ষগুলোর ফল খেয়ে বনে বসবাসকারী প্রাণীরা বেঁচে থাকে। বনে বসবাসকারী প্রাণীদের মধ্যে রয়েছে উল্লুক, বানর, চশমা বানর, হনুমান ইত্যাদি।
পরবর্তীতে এরকম সুন্দর একটা আনন্দ ভ্রমণের আয়োজন করার জন্য বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতিকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন এবং এই রকম আয়োজন আগামীতে যেন অব্যাহত থাকে এমনটি প্রত্যাশা রাখেন উপস্থিত শিক্ষকবৃন্দ।
Leave a Reply