সেলিম মাহবুব,সুনামগঞ্জঃ
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকের নিজ আইডি থেকে লাইভ সম্প্রচার করে কথা বলতে-বলতে অফিসার সহ অন্তত ডজন খানেক পুলিশের মাঝখান থেকে আচমকা উধাও হয়ে গেছেন ছাতকের সিংচাপইড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিন মোহাম্মদ সাহেল। এ ঘটনায় ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। কেউ বলছেন চেয়ারম্যানের সমর্থকরা সরকারী কাজে পুলিশকে বাধা দিয়ে চেয়ারম্যানকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছে। পুলিশ বলছে চেয়ারম্যানের সমর্থকরা তাকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। আবার কেউ-কেউ বলছেন, আটকের খবরে চেয়াম্যানের সমর্থকরা ইউনিয়ন পরিষদে এসে ভির করায় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা অনেকটা বিভ্রান্তিকর অবস্থায় পড়ে যায়। এ সুযোগে সাহেল চেয়ারম্যান পরিষদ ত্যাগ করতে সমর্থ হয়। এ চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলার সিংচাপইড় ইউনিয়ন পরিষদে। চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিন মোহাম্মদ সাহেলের এ লাইভ ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়েছে। তার লাইভ করা ভিডিও সূত্র থেকে জানা যায়, মঙ্গলবার চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিন মোহাম্মদ সাহেল তার পরিষদে বসে অন্যান্য দিনের মতো অফিস করছিলেন। বিকেলে জাউয়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ আব্দুস ছালাম ফোন করে চেয়ারম্যান সাহেল নিজ অফিসে আছেন মর্মে নিশ্চিত হন। এক পর্যায়ে অন্তত ডজন খানেক পুলিশ এসে পরিষদ ঘেরাও করলে চেয়ারম্যানের আর বুঝতে অসুবিধা হয়নি। এসময় আলাপচারিতা শেষে তাদের সাথে থানায় যাওয়ার জন্য চেয়ারম্যানকে বলেন পুলিশ। কিন্ত এখানে বাধ সাধে আইনী প্রক্রিয়া। চেয়ারম্যান সাহেলের কঠিন সিদ্ধান্ত-কোন অভিযোগ, ওয়ারেন্ট কিংবা গ্রেফতারী পরোয়ানা শু না করা পর্যন্ত একটি পাও নড়বেন না তিনি। এ নিয়ে পুলিশ এবং চেয়ারম্যান সাহেলের মধ্যে বেশ কিছুক্ষণ বাক-বিতন্ডা হয়। এ সময় লাইভে থাকা অবস্থায় বিষয়টি মসজিদের মাইকে প্রচার করার কথা বলেন সাহেল চেয়ারম্যান। এক পর্যায়ে আশপাশ গ্রাম থেকে সাহেল চেয়ারম্যান সমর্থকরা পরিষদ চত্ত্বরে এসে ভির জমায়। পরিস্থিতি ক্রমশ অবনতির দিকে ধাবিত হতে থাকলে চেয়ারম্যানকে গাড়িতে তুলতে তোরজোড় শুরু করে পুলিশ। কিন্তু সবই সে গুড়ে বালি। কোন পরিস্থিতিই তাকে সরকারী এ চেয়ার থেকে অন্যায়ভাবে নিতে পারবে না বলে পুলিশকে সাফ জানিয়ে দেন সাহেল চেয়ারম্যান। কিছুক্ষণ পর পুলিশের কিছুটা ঢিলেঢালা ভাব পরিলক্ষিত হলো। ঠিক এ সময়টিই বেচে নিলেন সাহেল চেয়ারম্যান। লাইভে থেকেই পলায়নের ফন্ধি করতে থাকেন। অনেকটা জোরে-জোরেই মোটরসাইকেল আনো, স্টার্ড দিয়ে রাখো, সে একজন ভালো চালক কিনা, হট্টগোল শুরু করবে এ ফাঁকেই চলে যাবো-তার এক সমর্থকের সাথে এমন পরামর্শই করতেই শোনা গেছে। যেই কথা সেই কাজ। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে নিরুদ্দেশ হলেন চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিন মোহাম্মদ সাহেল। আটকের পর সাহেল চেয়ারম্যান পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লে প্রশাসন ও সাধারন মানুষের মাঝে বিভিন্ন প্রশ্নের উদ্ভব হয়। চেয়ারম্যানকে পালিয়ে যেতে সহায়তায় জড়িত থাকার কারনে সন্ধ্যায় ঘটনাস্থল থেকে ৫ জনকে যৌথ বাহিনী আটক করে। আটকৃতরা হলেন, সিংচাপইড় গ্রামের আব্দুল জব্বারের পুত্র কামাল আহমদ (২৬), গহরপুর গ্রামের আব্দুল বারীর পুত্র ইজাজুর রহমান (২৭), মাওলানা নুর উদ্দিন আহমদের পুত্র খলিলুর রহমান (২৯), ছত্রিশ কালিপুর গ্রামের আব্দুল আউয়ালের পুত্র রেজা মিয়া (২৫) ও গহরপুর গ্রামের জামাল উদ্দিনের পুত্র সাইম উদ্দিন (২০)। এ ঘটনায় চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিন মোহাম্মদ সাহেলকে প্রধান আসামি করে আটককৃত ৫ জন সহ ৩৪ জনের নাম উল্লেখ সহ বুধবার ছাতক থানায় একটি পুলিশ এসল্ট (মামলা নং ১০) দায়ের করা হয়েছে। ছাতক থানার অফিসার ইনচার্জ গোলাম কিবরিয়া হাসান জানান, সুনামগঞ্জ সদর থানার একটি মামলার আসামি ইউপি চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিন মোহাম্মদ সাহেলকে মঙ্গলবার পুলিশ আটকের পর তাকে ছিনিয়ে নেয়া হয়। এ ঘটনায় ছাত থানায় পুলিশ এসল্ট মামলা হয়েছে।
Design & Developed BY: ServerSold.com
https://writingbachelorthesis.com
Leave a Reply