সিলেট প্রতিনিধি::
কোটিপতি দারোগা সুনামগঞ্জের জুনেদের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর যত অভিযোগ
তার নাম জুনেদ আহমদ। বাড়ি সুনামগঞ্জ পৌরসভার মোহাম্মদপুর গ্রামে। সুনামগঞ্জে পড়ালেখা শেষ করে সিলেটে এসে টিলাগড়স্থ একটি কলেজে ভর্তি হন তিনি। এক সময় ছিলেন ছাত্রলীগের ক্যাডার। সিলেট সুনামগঞ্জ জেলার বাসিন্ধা সাবেক এমপি রঞ্জিত সরকার গ্রুপের ক্যাডার হিসাবে পরিচিত ছিলেন তিনি। সেই সুবাধে আওয়ামী লীগের শাসন আমলে চাকরি পেয়ে যান বিশেষ সুপারিশে।
পুলিশের চাকরির সুবাদে তিনি ২০১৭ সালে গোয়াইনঘাট থানায় থানায় এসআই হিসাবে কর্মরত ছিলেন। সে সময় গোয়াইনঘাট থানার ওসি ছিলেন আওয়ামী লীগের আরেক প্রভাবশালী ক্ষমতাধর ব্যক্তি দেলোয়ার হোসেন। এ সময় আলাদিনের প্রদীপ পেয়ে যান এসআই জুনেদ আহমদ। সরাসরি জড়িয়ে পড়েন ঘুষ, মামলা বাণিজ্যর সাথে। গোয়াইনঘাটের বিভিন্ন এলাকার পাথর কোয়ারি থেক কোটি-কোটি টাকার বালু-পাথর লুটপাটে খান তিনি। সে সময় বিএনপির নেতাকর্মীরা ছিলেন তার কাছে চরম অসহায়। লাইনম্যান নামের চাঁদাবাজদের সাথে সরাসরি জড়িত ছিলেন এসআই জুনেদ আহমদ।
বিগত ২০১৭ সালে ওসি দেলোওয়ার ওমরাহ পালনের ছুটিতে থাকা অবস্থায় জাফলং কোয়ারি এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব্য সৃষ্টি করতে পাথর কোয়ারীর একটি ঘরে ঘুমন্ত ৭ জন শ্রমিককে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। যদিও তারে প্রাণে বাচেঁন চিকিৎসা শেষে। ওসি দেলোওয়ার হোসেন সেদিন ওমরাহ থেকে এসেই থানায় যোগদান করেই মামলাটি রুজু করেছিলেন এসআই জুনেদের কথায়। সে সময় লাইনম্যানদের এক সদস্যকে বাদী করে গোয়াইনঘাট থানার মামলা নং ৩৩/২০১৭ইং (তাং ২০/৫/২০২৭ ইং) রুজু করা হয়। উক্ত মামলায় প্রকৃত আসামীদের আড়াল করতে এসআই জুনেদ বড় অংকের টাকা নিয়ে জাফলং এলাকার নিরিহ মানুষকে আসামী করেন। উক্ত মামলটি দায়েরের পর আসল অপরাধীদের কোয়ারিতে লুটপাটের সুযোগ দিতে তাদের কাছ থেকে আরেক দফা বড় অংকের টাকা নেন। আসল আসামীদের আড়াল করে নিরোপরাধ অনেককে আসামী করে আবার অজ্ঞাতনামায় নাম দিয়ে দিবেন বলে বাণিজ্যে করে প্রায় ২০ লক্ষ টাকা হাতি নেন। মামলার বাদী ছিলেন কেবল তুপেরতাস মাত্র। মূল খলনায়ক ছিলেন এসআই জুনেদ আহমদ। এ ঘটনার পর ওসি বদলী হলে থানায় নতুন ওসি হিসাবে যোগদান করে আব্দুল জলিল।
তিনি যোগদান করার পর এসআই জুনেদকে আর পিছনে থাকাতে হয়নি। সে সময় লাইনম্যানের ক্ষমতা চলে যায় নয়াবস্তির মুক্তিযোদ্ধা ইনছান আলীর ছেলে আলীম উদ্দিন গংদের কাছে। এসআই জুনেদ ওসি আব্দুল জলিলের পছন্দের লোক হওয়ায়, পেয়ে যান ৩নং পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের বিট অফিসারের দায়িত্ব। উক্ত মামলায় চার্জসিট থেকে নাম বাদ দিতে এসআই জুনেদ বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে বড় অংকের টাকা নেন। অথচ তদন্তকালে ঘটনার সাথে তাদের কোন সংশ্লিষ্টতা পাননি তিনি। সে সময় নিরোপরাধ প্রতিজন মানুষের কাছ থেকে জুনেদ ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা করে ঘুষ নিয়ে ছিলেন। বিট অফিসার হওয়ার পর লাইনম্যানদের সাথে আরো সখ্যাতা গড়ে উঠে এসআই জুনেদের।
আইনের অপব্যবহার করে নিরিহ অনেক সাধারণ মানুষের জমিসহ স্থানীয় বিএনপি ও যুবদল নেতাকর্মীর জমি জবর দখল করে পাথর উত্তোলন করে লুটেপুটে খেয়েছেন। থানার সাবেক ওসি আব্দুল জলিলের খুব আস্থাভাজন দারোগা হওয়ায় পাথর কোয়ারী এলাকার সকল টাকা-পয়সা, চোরাচালানের টাকা ওসির কাছে আসতো এসআই জুনেদের হাত হয়ে। জাফলংয়ের অনেক বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, শুধু গোয়াইনঘাটে থাকা অবস্থায় জাফলং কোয়ারি থেকে এসআই জুনেদ প্রায় ১০ কোটি টাকার মালিক হয়ে হন। তিনি জাফলং থেকে রাতে চটের বস্তা দিয়ে টাকা নিয়ে থানায় আসতেন। সেই বির্তকৃত মামলার নিয়ে অনুসন্ধানী রির্পোট করার কারণে এসআই জুনেদের নেতৃত্বে সাংবাদিক আব্দুল আব্দুল হালিম সাগরসহ আরো তিন অংশীদারের নগদ টাকা দিয়ে কিনা ভূমির পাথর উত্তোলন করে লুট করে নেন এসআই জুনেদ ও তার বাহিনীর সদস্যরা।
সে সময় সিলেট জেলার এসপি মনিরুজ্জানের নজরে বিষয়টি নিয়ে আসলে তিনি ওসিকে একাধিক বার নির্দেশদেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য। থানার তৎকালীন ওসি তদন্ত হিল্লোল রায় সকল কাগজপত্র যাচাই করে এসআই জুনেদকে বিষয়টি সমাধানের কথা বলেন, এসআই জুনেদ থানায় কর্মরত তার সিনিয়র আরো তিনজন এসআই ও কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীকে নিয়ে গোয়াইনঘাট থানার বিপরীতের বাজারে রাজমহল সুইটমিট নামের রেষ্টুরেন্টের একটি কেবিনে বসে সাগরের জমির কাগজপত্র যাচাই করে, নিশ্চিত হয়েছিলেন উক্ত জমির খরিদ সূত্রে প্রকৃত মালিক সাংবাদিক সাগরসহ আরো দুইজন।
তখন এসপিকে এসআই জুনেদ বলেন, স্যার উক্ত জমি থেকে পাথর উত্তোলনকৃত বিক্রয়ের টাকাগুলো মধ্যেখানে একজনের কাছে জমা রাখা আছে। আমি ২/৩ দিনের মধ্যে সমস্যাটির সমাধান করে দিয়ে দিবো। সেই যে দুই-তিন দিন আর আসেনি এসআই জুনেদের জীবনে। ঐ সময় জুনেদ নিজ মুখে বলেন, উক্ত জমি থেকে প্রায় দেড় কোটি টাকার পাথর উত্তোলন করা হয়েছে। টাকাগুলো জাফলংয়ে লাইনম্যানদের গডফাদার আওয়ামী লীগ নেতা সামছুল আলম উরফে কালা সামছুর কাছে জমা রাখা আছে। কারন সে সময় সামছুলের ভাই গোয়াইঘাট কলেজ থেকে বিতাড়িত প্রফেসর ফজলুর কথায় চলতো থানা পুলিশসহ স্থানীয় প্রশাসন। লাইনম্যানদের মামার বাজারস্থ অফিসে বসে থাকতেন এসআই জুনেদ। এই অফিসে বসেই উক্ত টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছিলেন এসআই জুনেদ, ওসি জলিল ও সামসুলসহ লাইনম্যানরা। এ সময় এসআই জুনেদ এতো ক্ষমতাধর ছিলেন, তার জন্য খোঁদ সাবেক স্থানীয় মন্ত্রী ইমরান আহমদ সরাসরি সুপারিশ করতেন। তাই সকলেই ছিলেন অসহায়।
এ সময় বিএনপি, যুবদল কারো জমি শুনলেই এসআই জুনেদসহ লাইনম্যানরা জবর দখল করে নিতো। লাইনম্যানদের সাথে এসআই জুনেদ সরাসরি জড়িত থাকায়, বিনা পুঁজিতে ওসি আব্দুল জলিল ও নিজ নামে ২৫% শেয়ারের মালিক হয়ে যেতেন। প্রতিটি বোমা মেশিনের গর্তে তিনি ছিলেন বিনা পুঁজির অংশিদার। নিজ জমিতে কেউ পাথর উত্তোলন করলে এসআই জুনেদ দলবল নিয়ে ছুটে গিয়ে বাধাঁ দিতেন। নগদ ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা চাঁদা চেয়ে বসতেন। না হলে কাজ বন্ধ করে আসতেন। পরে লাইনম্যানদের মধ্যস্থতায় তাকে ২৫% শেয়ার দিয়ে দিতে বাধ্য করা হতো।
জাফলং মামার দোকান এলাকার বাসিন্ধা নও মুসলিম সাবেক যুবদল নেতা সুমন আহমদ অভিযোগ করেন, এসআই জুনেদ তার মালিকাধিন জমি থেকে জোরপূর্বক পাথর উত্তোলন করে নিয়ে যান। সে সময় বাধা প্রদান করায় তাকে শ্রমিকদের আগুন দেওয়ার ঘটনার মামলায় এজাহারভুক্ত আসামী করেন এসআই জুনেদ। অথচ ঘটনার রাতে তিনি তাবলিগ জামায়াতে ছিলেন। ফিরে এসে শুনতে পান তিনি শ্রমিক পুড়ানোর মামলার এজাহারভুক্ত আসামী। পরে এসপির নির্দেশে সেই মামলা থেকে তদন্ত সাপেক্ষে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হলেও এসআই জুনেদ কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন। সে সময় সুমনের ছোটবোনের বিয়ে থাকায় সুমন জুনেদকে টাকা দিতে বাধ্য হন। না হলে বিয়ের অনুষ্টান থেকে সুমনকে গ্রেফতারের হুমকি দেন এসআই জুনেদ। এ সময় এভাবে অনেকের কাছ থেকে টাকা নেন জুনেদ। তিনি যাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে তাদের মধ্যে ছিলেন, মোঃ রাজু আহমেদ, আক্তার হোসেন, আব্দুল আজিজ, আলমাস মিয়া, আব্দুস সালাম ,খোকন আহমেদ, যুবদল নেতা সুমন আহমেদ।
উপজেলা বিএনপির যুব-বিষয়ক সম্পাদক নুরুল সিকদার অভিযোগ করেন, তিনিসহ থানার জনৈক দারোগা একখন্ড জমি খরিদ করেছিলেন, কিন্তু তিনি বিএনপি রাজনীতি করার অপরাধে এসআই জুনেদ আহমদ সেই জমি থেকে পাথর উত্তোলন করিয়ে নেয় লাইনম্যানদের নিয়ে। থানায় অভিযোগ দিতে গেলেও ওসি জলিল তা গ্রহণ করেননি।
ব্রাম্মনবাড়িয়ার বাঞ্চারামপুর থানার বাসিন্ধা নজরুল ইসলাম, ২০১৬ সালে জাফলং এসে দেড় লাখ টাকা দিয়ে জমি কিনে গৃহনির্মাণ করে বসবাস করতে থাকেন। জীবিকা নির্বাহ করতে তিনি রিক্সা চালিয়ে। কিন্তু সেই জমিতে পাথর থাকায় এসআই জুনেদ আহমদ তাকে চার লক্ষ টাকার বিনিময়ে জমিটি ছেড়ে দিতে চাপ প্রয়োগ করেন। তিনি তাতে রাজি না হওয়ায় লাইনম্যানদের কথায় তাকে ২০১৮ সালে গাঁজা দিয়ে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেন এসআই জুনেদ। পরে নজরুল ইসলাম জামিনে বেরিয়ে আসলেও আর জাফলংয়ে থাকতে পারেননি। সে সময় রাতের আধাঁরে তাকে এলাকা ছাড়া করেন এসআই জুনেদ। পরে সেই জমির উপর থাকা বসত ঘর ভেঙ্গে পাথর উত্তোলন করেন এসাআই জুনেদসহ লাইনম্যানরা।
সেই সময়কার একাধিক পুলিশ সদস্য অভিযোগ করেন, এসআই জুনেদের অত্যাচারে থানা কম্পাউন্টের ভিতরে আত্মহত্যা করতে বাধ্যহন এসআই দিলিপ বড়ুয়া। কারণ জুনেদ এসআই দিলিপকে মানষিকভাবে নানা রকম অত্যাচার করে আসছিলেন। কিন্তু ওসির খাসলোক হওয়ায় জুনেদ সব দায় থেকে পার পেয়ে যান। এ সময় জুনেদ নিজ বিট এলাকা জাফলং বাজারের শফি মার্কেটে একটি ভাড়া বাসা নিয়ে থাকতেন। প্রতিটি গর্তে এক্সেভেটার দিয়ে পাথর উত্তোলন করতে এসআই জুনেদ ৩০ হাজার টাকা করে নিতেন। সেই কর্মজজ্ঞ চলতো রাত ৮ থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত। এ সময় জাফলং কোয়ারিতে প্রায় সাড়ে তিন শতাধিত মেশিন চলতো প্রতি রাতে।
এই সময়ের অনেক নির্যাতিত ভ‚ক্তভোগী বক্তব্য দিয়েছেন এ প্রতিবেদকের কাছে, যা সংরক্ষিত রয়েছে। সে সময় এসপি অফিসে একাধিক অভিযোগ হয়েছিলো জুনেদের বিরুদ্ধে কিন্তু সাবেক মন্ত্রী ইমরানের এপিএস হিসাবে পরিচিত সাবেক অধ্যক্ষ ফজলুর রহমান হয়ে উঠেন এসআই জুনেদের রক্ষা কবজ। এ সময় এই এসআই জুনেদের জন্য এসপিকে সরাসরি ফোন দিয়ে দিতেন পালাতক মন্ত্রী ইমরান আহমদ। এই সময়ের অনেক নির্যাতিত ভ‚ক্তভোগী বক্তব্য দিয়েছেন এ প্রতিবেদকের কাছে। জুনেদ কিভাবে টাকা আদায় করতেন মিথ্যা মামলা দিয়ে।
এসব ঘটনার পর এসআই জুনেদকে জেলার গোলাপগঞ্জ থানায় বদলী করা হয়। পরে সেখান থেকে ফেঞ্চুগঞ্জ থানায় এবং পরে ২০২০ সালে মৌলভীবাজার জেলায় বদলী হন জুনেদ। এসআই জুনেদ আহমদ এখন ঢাকা (ডিএমপি)র শেরেবাংলা নগর থানায় কর্মরত আছেন। ভোক্তভোগীরা বলেন, এসআই জুনেদের ব্যাংক একাউন্ট আর বিকাশ লেনদেন তথ্যটা যাচাই করলে লুটপাটের অনেক তথ্য পাওয়া যাবে। অনেকে আবার এসআই জুনেদের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
Design & Developed BY: ServerSold.com
https://writingbachelorthesis.com
Leave a Reply