মোহাম্মদ মাসুদ
ভারত বাংলাদেশের একসময়ের মধুর সম্পর্ক একাত্তরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু এখন তেতো। বাংলাদেশের স্বাধীনতায় ভারতের অবদান চিরস্মরণীয়। বর্তমান পরিস্থিতি প্রেক্ষাপটে এখন ভিন্ন।
ড. ইউনূস ও তার উপদেষ্টাদের দাবি, ভারত থেকে ধারাবাহিকভাবে অতিরঞ্জিত ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। বাংলাদেশের পতাকা ন্যাক্কারজনক চরম অবমাননা ও আগুন লাগানো হয়। আগরতলায় বাংলাদেশেরন হাইকমিশনে ভাঙচুরের ঘটনায় তীব্র সমালোচনা ঝড় উঠে প্রতিবেশী ঘনিষ্ঠ বন্ধু প্রতীম দুই দেশ ও আন্তর্জাতিক মহলে।
বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে উত্তাল ভারত বাংলাদেশের সম্পর্ক। হাইকমিশনে হামলা করে দু দেশের চুক্তি লঙ্ঘন করল ভারত। ভারতে বাংলাদেশ সহকারী হাই কমিশনে হামলার ঘটনায় রাজনৈতিক দল বিএনপি ছাত্রশিবিরসহ সকল রাজনৈতিক দল ও ঐক্যমতের তীব্র নিন্দা জানাই। আগরতলায় বাংলাদেশের হাইকমিশনে ভাঙচুর, ভারতের দুঃখ প্রকাশ। কলকাতায় বাংলাদেশের পতাকার অবমাননা, ঢাকার তীব্র নিন্দা উদ্বেগ প্রকাশ।
২ডিসেম্বর (সোমবার) দুপুরের দিকে আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে ভাঙচুর ও জাতীয় পতাকা নামিয়ে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আগরতলার বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনের সামনে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারের বিরুদ্ধে হিন্দু সংঘর্ষ সমিতি নামের একটি সংগঠনের সভা ছিল। সভা শেষে সংগঠনের ছয়জনের একটি প্রতিনিধি দল হাইকমিশন কার্যালয়ের ভেতরে যায় স্মারকলিপি জমা দিতে। সমাবেশ থেকে অভিযোগ করা হয়, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। এটি বন্ধ না হলে ভবিষ্যতে সীমান্তে দীর্ঘমেয়াদি অবরোধ দেওয়ার ঘোষণাও দেন তারা।
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে কয়েক মাস ধরে জমাট বাঁধা উত্তেজনা এবার সামনে এসেছে। রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে বাংলাদেশে একজন হিন্দু পুরোহিতকে গ্রেপ্তারের পর দুই প্রতিবেশী পরস্পরের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযোগ তুলেছে।
গত ৫ আগস্টের পর শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেন। সেখানে তার উপস্থিতি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের টানাপোড়েন বাড়িয়েছে।
অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার ভিডিওতে দেখা যায় বিক্ষোভকারীরা বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নামিয়ে ফেলার পর তাতে আগুনও ধরিয়ে দিয়েছে। ওই ঘটনার সময়কার কিছু ভিডিও ফুটেজ মুহূর্তের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
ঘটনাসূত্রে জানা যায়,এ সময় বাইরে থাকা কিছু হিন্দু যুবক হঠাৎ বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশন কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নামিয়ে ছিড়ে ফেলে, ঘটনাস্থল থেকে এমন কিছু ভিডিওচিত্র পাওয়া গেছে। পরে হাইকমিশন কার্যালয়ের কিছু সাইনবোর্ড ভাঙচুর করে ও আগুন লাগিয়ে দেয় তারা।
এ বিষয়ে হিন্দু সংঘর্ষ সমিতি কার্যকরী সদস্য বিকে রয় জানিয়েছেন, ডেপুটেশন দেওয়ার সময় বাইরে কী ঘটনা ঘটেছে তা তারা দেখেননি এবং তারা ডেপুটেশন দিয়ে আসার পরও কাউকে অফিসের ভেতরে দেখতে পাননি।
ঘটনার খবর পেয়ে ত্রিপুরা পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের অফিসটি ঘুরে দেখেন এবং হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলেন। তবে এ বিষয়ে ভারতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে কোনো মন্তব্য করেনি।
এদিকে বিক্ষোভ হয়েছে ভারতের পেট্টাপোল সীমান্তেও। সেখানে সমাবেশ হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলের নেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে। একই ঘটনায় বিক্ষোভ হয়েছে ভারতের কোচবিহারেও। সেখানে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কুশপুত্তলিকা পুড়িয়ে বিক্ষোভ দেখায় সনাতনী হিন্দু মঞ্চ। সংগঠনটির সদস্যরা পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া চ্যাংড়াবান্ধায় বিক্ষোভ মিছিলও করে। এই কর্মসূচি ঘিরে কড়া নিরাপত্তা ছিল সীমান্ত এলাকায়।
ড. ইউনূস ও তার উপদেষ্টাদের দাবি, ভারত থেকে ধারাবাহিকভাবে অতিরঞ্জিত ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। নিউ ইয়র্ক টাইমসের সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস স্বীকার করেছেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বর্তমানে বেশ উত্তপ্ত। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার ভারতে আশ্রয় নেওয়া ও সেখান থেকে বাংলাদেশ সরকারকে চরমপন্থীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বলে প্রচার করাটা দুই দেশের সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর। তিনি বলেছেন, শেখ হাসিনা ভারতে আছেন। তিনি কথা বলে যাচ্ছেন। এটি পুরো দেশের জন্য অস্থিতিশীলতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা ভারত সরকারকে বোঝাতে চেষ্টা করছি, এটি ন্যায়সংগত নয়। আপনি এমন একজনকে জায়গা দিচ্ছেন, যাকে বাংলাদেশ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশকে আফগানিস্তানের মতো রাষ্ট্র হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছে ভারত এমন অভিযোগ জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, আপনারা যদি বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করেন, তাহলে নিজেদেরও অস্থিতিশীল করবেন। কারণ, অস্থিতিশীলতার উপাদানগুলো চারপাশে ছড়িয়ে পড়বে।
তবে বিশ্লেষকদের দাবি, অন্তর্বর্তী সরকার চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে ঔপনিবেশিক যুগের রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের আওতায় গ্রেপ্তার করে নিজেদের অবস্থান দুর্বল করেছে। এই আইনটি শেখ হাসিনার শাসনামলেও বিরোধীদের দমন করার জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে।
Design & Developed BY: ServerSold.com
https://writingbachelorthesis.com
Leave a Reply