পায়েল, স্টাফ রিপোর্টার:
ফেরেববাজ চিতলমারীর শহিদুল এখন খুলনার পিস্তল সোহেল। জোচ্চুরি করে প্রশাসনের কাজ থেকে নিয়েছেন পিস্তল।এ যেন হাতে পেয়েছেন আলাউদ্দিনের চেরাগ,শেখ পরিবারের নাম ভাঙ্গিয়ে গড়ে তুলেছেন অঢেল সম্পদের পাহাড়। নিজ বলায় সৃষ্টি করতে বিএনপি ও আ’লীগের একাধিক শীর্ষ নেতার নামে করেছেন মামলা।এমনকি সাধারণ মানুষও তার হাত থেকে রেহাই পাননি, তার কথার বাহিরে গেলেই খেতে হয়েছে মামলা পেতে হয়েছে সাজা, প্রবঞ্চক সোহেলের মুখোস উন্মোচনে সোচ্ছার হচ্ছে বাগেরহাট ও খুলনাবাসী। তিনি ঘোলা গ্রামের অপসারপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য মোঃ মিজানুর রহমানের ছেলে।
জানা যায়, ফেরেববাজ শহিদুল ইসলাম ওরফে (পিস্তল সোহেল) এখন খুলনার ত্রাস। বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার ঘোলায় তার গ্রামের বাড়ি। ধান্দাবাজই তার অর্থ উপার্জনের মূল চাবিকাটি। প্রভাব বিস্তার করতে আগ্নে অস্ত্রের লাইসেন্স পেতে নিজের জন্ম তারিখ পরিবর্তন করতেও তিনি পিছু হটেনি। ভোটার তালিকা এবং শিক্ষাগত সনদে ১৯৯৪ সালে জন্ম তারিখ থাকা শর্তেও পিস্তলের লাইসেন্স পেতে জালিয়াতি করে ১০ বছর বয়স বাড়িয়েছেন প্রতারক সোহেল। তার কাছে একটি লং ব্যারেল শটগান ও একটি এনপিবি পিস্তল আছে। তিনি লাইসেন্স ও আবেদনপত্রে জন্ম তারিখ উল্লেখ করেছেন ০১-১০-১৯৮৪ খ্রী এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখিয়েছেন অষ্টম শ্রেণি পাশ। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তার জন্ম তারিখ ০১-০৩-১৯৯৪ খ্রী। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের আওতাধীন চিতলমারীর শহিদুল এখন বড়বাড়িয়া রহমানিয়া ফাজিল মাদ্রাসা হতে দাখিল পাশ করে। যার রোল নম্বর-১৮৬২১৫, রেজি:-২৭৯১৩২ ও সেশন ২০০৭-২০০৮।
আওয়ামী সরকারের শাসন আমলে শেখ পরিবারের নাম ও ছবি ব্যবহার করে বনে গেছেন কোটি কোটি টাকার মালিক। সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে জোড়পূর্বক ভোট দিতে জনগণকে বাধ্য করেছে সোহেল এমন ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল। শুধু তাই নয়, নিজবলয় সৃষ্টি করতে অবঃপ্রাপ্ত সাবেক বিচারপতি এএইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলে। এমনকি সোহেলের খুলনার ৭তলা আলিশান বাড়িতেও গেছেন বিচারপতি মানিক। তার নাম ভাঙ্গিয়ে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজ তিনি করেছেন বলে জনশ্রুতি আছে। ঠিকাদারীর মাধ্যমে শহিদুল ইসলাম সোহেলের টাকা বানানোর উৎস্য শুরু। নিম্নমানের কাজ এবং কাজ না করে বিল উত্তোলণের জন্য এলজিইডি নির্বাহি প্রকৌশলীকে চাপ প্রয়োগ করতো। প্রকৌশলীকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ইতোপূর্বে অনেক বিল উত্তোলণ করেছেন তিনি। তাকে সুবিধা না দেয়ার কারণে ২০২৪ সালের ২৩ এপ্রিল তৎকালীন এলজিইডি অফিসের নির্বাহি প্রকৌশলী একেএম আনিছুজ্জামানের বিরুদ্ধে সোনাডাঙ্গা থানায় মামলা করে। অপরদিকে ২৮ এপ্রিল খুলনা মহানগর বিএনপির আহবায়ক এ্যাড, এসএম শফিকুল আলম মনার বাড়ি ভাংচুর মামলায় ৪৫ নম্বর আসামি তালিকায় পিস্তল সোহেলের নাম পাওয়া যায়।
শহিদুল ইসলাম ওরফে পিস্তল সোহেলের খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের পাশে ডুমুরিয়ার আঠারোমাইল এলাকায় কার্পেটিং মিক্সার প্লান্ট মেশিন আছে। বিভিন্ন ঠিকাদারের কাজে কার্পেটিং সরবরাহ করেন তিনি। ডুমুরিয়া, দাকোপসহ বিভিন্ন এলাকায় গ্রামীণ সড়ক গুলোতে কার্পেটিং, গ্রিনওয়েল, বিটুমিন সরবরাহ করবে বলে ডজন খানেক ঠিকাদারের নিকট থেকে বিভিন্ন সময় কয়েক কোটি টাকা অগ্রীম হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা সোহেল। এ নিয়ে খুলনা সেনাক্যাম্পেও অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে আসলাম মৌলভী নামের এক ঠিকাদার বলেন, কার্পেটিং দিবে বলে ১ কোটি ৩লাখ টাকার একটা চুক্তি করেছিলাম। গত ২২ মে ৩টি চেকের মাধ্যমে ৪০ লাখ টাকা অগ্রীম দিয়েছি তাকে। কিন্তু কাল দিবো পরশু দিবো বলে এখনো দেয়নি। এদিকে ইঞ্জিনিয়র অফিস থেকে আমাকে চাপ দিচ্ছে রাস্তা শেষ করতে। এখন শুনছি সোহেল খুলনা ছেড়েছে। এমতাবস্থায় কাজ যদি বাতিল হয়ে যায়, তাহলে পথে বসা ছাড়া আর উপায় থাকবে না।
খুলনা জেলা এলজিইডি ঠিকাদার কল্যাণ সমিতির সদস্য সচিব মো. বদরুদ্দোজা বাবলু বলেন, চিতলমারীর শহিদুল ইসলাম ওরফে পিস্তল সোহেল একজন শীর্ষ ফেরেববাজ। সে প্রতারণা করে বয়স বাড়িয়ে অস্ত্র ক্রয় করেছে। তার কাছে কার্পেটিং, গ্রিন ওয়েল ও বিটুমিন বাবদ অগ্রীম কয়েক কোটি টাকা পাবে ডজন খানেক ঠিকাদার। যার কারণে খুলনার বেশ কয়েকটি গ্রামীণ সড়কে কার্পেটিং কাজ বন্ধ আছে। এতে সরকারের উন্নয়ন ব্যহত হচ্ছে।
এ বিষয়ে শহিদুল ইসলাম ওরফে পিস্তল সোহেল বলেন, আমার জন্ম-তারিখ সংশোধন করে পিস্তল কিনেছি। আমার সাথে শেখ পরিবারের সর্ম্পক ছিল এবং আছে। এমনকি আমার কাছ থেকে শেখ সোহেল চাঁদাও নিয়েছে। যা নিয়ে আমি মামলা করেছি। আগের নির্বাহি প্রকৌশলীকে অনৈতিক সুবিধা না দেয়ায় আমার নামে অপপ্রচার করেন। বিভিন্ন ঠিকাদারের সাথে কাজের চুক্তি আছে ঠিক। ইতিমধ্যে অনেকের সাথে আমার কথা হয়েছে। দ্রুত সকলের কাজ শেষ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
Design & Developed BY: ServerSold.com
https://writingbachelorthesis.com
Leave a Reply