
সেলিম মাহবুবঃ
বিডা ও কিছু উপদেষ্টা বিদেশী পোর্ট অপারেটরদের মার্কেটিং অফিসারদের মত কথা বলছে ও আচরণ করছে বলে অভিযোগ করেছে ‘স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টি’।
“চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশীদের দেয়ার ঝুঁকি, ক্ষয়ক্ষতি ও বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে করণীয়” বিষয়ক এক সংবাদ সম্মেলনে আজ ৯ ডিসেম্বর ২০২৫ (মঙ্গলবার) বিকেল সাড়ে ৩’টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে ‘স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টি’র নেতৃবৃন্দ এই অভিযোগ তোলেন।
সংবাদ সম্মেলনে স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টি’র নেতৃবৃন্দ বলেন,
প্রথমত:
দেশ, দেশীয় প্রতিষ্ঠান এবং চট্টগ্রাম বন্দরে নিয়োজিত অপারেটরদের দুর্নাম করা এবং বিদেশী ও বিদেশী পোর্ট অপারেটরদের প্রশংসা করাই যেন বিডার নির্বাহী ও নৌ উপদেষ্টার মূল চাকুরীতে পরিণত হয়েছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, বন্দর কেন্দ্রীক দুর্নীতি, চাঁদাবাজী ও অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা থাকলে সেগুলোর উৎস চিহ্নিত করে তা রোধ করা সরকারের অন্যতম প্রধান কাজ। কিন্তু সরকার দুর্নীতিবাজ ও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না, তাদের তালিকা প্রকাশ করছে না। অথচ এর ধোয়া তুলে বিদেশীদের হাতে চট্টগ্রাম বন্দর তুলে দেয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে, যা অগ্রহণযোগ্য।
দ্বিতীয়ত:
I2U2 (India, Israel, UAE, USA) মাল্টিলেটেরাল চুক্তির থাকায় ডিপি ওয়ার্ল্ডের হাতে চট্টগ্রাম বন্দর চলে গেলে মাল্টিলেটেরাল পার্টনার হিসেবে আরব আমিরাতের ঘণিষ্ঠ মিত্র ভারত, আমেরিকা ও ইজরাইলের পরোক্ষ উপস্থিতি, প্রভাব ও তাদের বার্গেইনিং পাওয়ার আমাদের চট্টগ্রাম বন্দরে নিশ্চিত হবে, যা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে যে কোনো মুহূর্তে ঝুঁকিতে ফেলে দিতে পারে।
তৃতীয়ত:
বিদেশি কোম্পানিকে বন্দর পরিচালনার ভার দিলে বাংলাদেশের অর্থনীতি নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বর্তমানে নিউমুরিং টার্মিনালে কন্টেইনার প্রতি ধার্য আনুমানিক ১১৯ ডলার, যার পুরোটাই বাংলাদেশের রিজার্ভ তথা অর্থনীতিতে যুক্ত হয়। কিন্তু লালদিয়ার চরে এপিএম টার্মিনালস কর্তৃক নির্মিতব্য টার্মিনাল থেকে কন্টেইনার প্রতি সরকার পাবে মাত্র ২১ ডলার। পতেঙ্গার মত ডিপি ওয়ার্ল্ডের হাতে নিউমুরিং টার্মিনালও চলে গেলে প্রায় একই অবস্থা হবে। ফলে বাংলাদেশ প্রতিবছর মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার হারাবে এবং দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে বড় ধরণের চাপ সৃষ্টি হবে। এছাড়া বিদেশী কর্তৃক অন্যাহ্য ট্যারিফ বৃদ্ধির ফলে দেশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দৈনন্দিন পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। তাছাড়া গোপন চুক্তিতে কী আছে সেটা তো আমরা এখনো জানতেই পারলাম না!
চতুর্থত:
দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ‘প্রোপাগান্ডা মেশিন’ মিথ্যা তথ্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। যেমন তারা ‘সিঙ্গাপুর ও ভিয়েতনামের বন্দরও বিদেশিরা চালায়’ মর্মে প্রোপাগাণ্ডা ছড়াচ্ছে, অথচ বাস্তবে সিঙ্গাপুরের একটি কন্টেইনার টার্মিনালও বিদেশি অপারেটররা চালায় না। এমনকি ভিয়েতনামে কোনো টার্মিনাল এককভাবে কোনো বিদেশি কোম্পানিকে দেয়া হয় নি। এককভাবে বিদেশীদের দেয়া হয়েছে মূলত আফ্রিকান রাষ্ট্রগুলোতে ও কিছু ক্ষেত্রে ভারতে। অতএব, সিঙ্গাপুরের মডেলে না গিয়ে ভারত কিংবা আফ্রিকান মডেল এনে অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশকে কি আফ্রিকা বানাতে চায়?
পঞ্চমত:
বাংলাদেশের অর্থনীতিকে যদি আমরা ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে চাই এবং বন্দর ব্যবস্থাপনার সমস্যা (জট, সিন্ডিকেট, দুর্নীতি ইত্যাদি) করতে চাই, তাহলে আমাদেরকে অবশ্যই বন্দর বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। এক্ষেত্রে সাগর ও নদী ভিত্তিক চীনের মডেল দেখা যেতে পারে। কিন্তু সরকর কর্তৃক সম্প্রতি গৃহীত ভারত কিংবা আফ্রিকান মডেল গ্রহণ করলে ক্ষতি ছাড়া কোনো লাভ হবে না বাংলাদেশের।
বাংলাদেশের নানাপ্রান্তে নতুন নতুন সমুদ্র বন্দর তৈরীর পাশাপাশি বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে যাওয়া নদী কেন্দ্রীক প্রচুর বন্দর তৈরী করার উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে। নদীশূণ্য এলাকায় পণ্য পরিবহণে রেল লাইনের সংযোগ দিতে হবে। এতে খরচ কমবে, সবকিছুর দাম কমবে, দেশের জেলায় জেলায় শিল্প ও কর্মসংস্থান তৈরী হবে, আমদানী-রপ্তানীতে জোয়ার সৃষ্টি হবে এবং দেশের তৃণমূল থেকেই আন্তর্জাতিক ট্রেডিং হবে।
এছাড়া, সরকারকে গুরুত্বসহ বিবেচনায় নিতে হবে যে, “পোর্ট অপারেটিং” বাংলাদেশের একটি অন্যতম বৃহৎ ইন্ডাস্ট্রি বা শিল্প। বিদেশীদের নিয়ে আসার নামে দেশীয় এই ইন্ডাস্ট্রি নষ্ট করার পায়তারা বন্ধ করে বরং এটিকে আন্তর্জাতিকীকরণ করতে হবে। বিভিন্ন দেশের বন্দর পরিচালনার কাজ পেতে সহযোগিতা করতে হবে।
অতএব, সরকারের কাছে আমাদের দাবী হচ্ছে-
১. নিউমুরিং টার্মিানাল ডিপি ওয়ার্ল্ডের সাথে লিজ প্রক্রিয়া বাতিল করতে হবে,
২. এপিএম টার্মিনালস ও মেডলগের সাথে লালদিয়ার চর ও পানগাও টার্মিনাল চুক্তি বাতিল করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টির আহবায়ক মুহম্মদ জিয়াউল হক, যুগ্ম আহবায়ক মুহিউদ্দিন রাহাত, দপ্তর সদস্য সাইফুল ইসলাম, জুবায়েদুল ইসলাম শিহাব, জাবির বিন মাহবুব, আব্দুল্লাহ আল মাহিনসহ অনেকে।
Leave a Reply