মিঠুন পাল, পটুয়াখালী প্রতিনিধিঃ
পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার গোলখালী ইউনিয়নের বাদুরা গ্রামে সপ্তম শ্রেনীতে পড়ুয়া এক কিশোরীকে স্থানীয় এক সন্ত্রাসী ধর্ষণ চেষ্টাসহ শ্লীলতাহানি করেছে। এ ঘটনায় কথিত সালিশের নামে স্থানীয় মেম্বারসহ কয়েকজন প্রভাবশালী উল্টো ওই কিশোরী এবং তার ভগ্নিপতিকে জনসমক্ষে জুতোপেটা ও মারধর করেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এ ঘটনায় ওই কিশোরীর বাবা মো. হেলাল হাওলাদার বাদি হয়ে পটুয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে একটি মামলার আবেদন করেছেন। যা আগামি ২১ জুন শুনানির তারিখ রয়েছে বলে কিশোরীর বাবা জানান। এদিকে পুলিশও পৃথক ভাবে ঘটনার তদন্ত করছে বলে জানিয়েছেন গলাচিপা থানার অফিসার ইনচার্জ শোনিত কুমার গায়েন।
মো. হেলাল হাওলাদারসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সূত্রে জানা গেছে, ওই কিশোরী (১৩) নলুয়াবাগী দাখিল মাদ্রাসার ৭ম শ্রেনীর ছাত্রী। প্রতিদিনের মতো গত ১০ জুন সন্ধ্যায় বাড়ির পাশে এক শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়তে যায়। সেখান থেকে ফেরার পথে একই এলাকার মেনাজ প্যাদার ছেলে হানিফ প্যাদা (৪০) ওই কিশোরীকে একা পেয়ে মুখ চেপে রাস্তার পাশে ঝোপের মধ্যে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা ও শ্লীলতাহানি করে। কিশোরীর ডাকচিৎকারে স্থানীয় সোহেল ও ছাত্রীর ভগ্নিপতি শাওন ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। তারা হানিফ প্যাদার কর্মকান্ড মোবাইল ফোনে ধারণ করে। পরের দিন সকালে এ ঘটনা নিয়ে স্থানীয় ইউপি মেম্বার মো. শহিদুল প্যাদাসহ স্থানীয় লোকজন কথিত সালিশ বৈঠকে বসে। কিশোরীর বাড়ির কাছে রাস্তার পাশে এক চায়ের দোকানে এ সালিশ বৈঠক বসে। সালিশকারীরা কারো কোনো কথা না শুনেই প্রথমে কিশোরীর ভগ্নিপতি শাওনকে জুতোপেটা করে। পরে কিশোরীকে অশালীন ভাষায় গালাগাল এবং জুতোপেটা করা হয়। এক পর্যায়ে সালিশকারীরা কিশোরীর বাবা ও ভগ্নিপতিসহ স্থানীয় পাঁচজনের একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে স্থান ত্যাগ করে। এ ঘটনার পর থেকে ওই কিশোরী ভয়ে আর মাদ্রাসায় যায়নি। তার পড়াশোনা প্রায় বন্ধের পথে।
কিশোরী অভিযোগ করে বলেন, আমি প্রাইভেট পড়ে বাড়ি ফেরার পথে রাস্তার পাশে একটা জঙ্গল আছিল। হানিফ আমার মুখ চাইপ্পা ধইররা জঙ্গলের মধ্যে নিয়া যায়। হে আমার জামা কাপড় খোলার সময় মুখের হাত সইরা গেলে আমি চিৎকার দিলে লোকজন আমারে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত হানিফ প্যাদা স্থানীয় সংবাদকর্মীদের বলেন, আমাকে মিথ্যা হয়রানি করা হচ্ছে। ঘটনা সত্য না।
ঘটনা সম্পর্কে নলুয়াবাগী সাংগঠনিক ইউনিয়নের যুবলীগের সভাপতি ও সালিশ বোর্ডের সদস্য আলমগীর ঘরামি বলেন, সালিশে আমার আসতে একটু দেরি হয়েছে। তবে আমি আসার আগেই মেম্বার উত্তেজিত হয়ে ছাত্রীটির ভগ্নিপতি ও ছাত্রীটিকে বকাবকি করেছে। জুতোপেটা আমি দেখিনি।
এ বিষয়ে গোলখালীর ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি মেম্বার মো. শহিদুল প্যাদা মোবাইল ফোনে বলেন, সব মিথ্যা। আমি আর কিছু জানি না। এ বিষয়ে গোলখালী ইউপি চেয়ারম্যান মো. নাসির উদ্দিন বলেন, লোকমুখে ঘটনা শুনেছি। আমি ঘটনাস্থলে যাচ্ছি।
গলাচিপা থানার অফিসার ইনচার্জ শোনিত কুমার গায়েন জানান, ঘটনা তদন্তের জন্য একজন কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ঘটনা সম্পর্কে গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মহিউদ্দিন আল হেলাল বলেন, ঘটনাটি আমার জানা নেই। তবে ইউপি মেম্বার এমন কোনো ঘটনায় জড়িত থাকলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Design & Developed BY: ServerSold.com
https://writingbachelorthesis.com
Leave a Reply