হুমায়ুন কবির,প্রতিনিধিঃ
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার পল্লী বিদ্যুৎ দাসপাড়া গ্রামের মেন্দেলু দাসের স্ত্রী আশা রাণী(৭৫) এর মরদেহ অবশেষে ২৮ ঘন্টা নিজ বাড়ির গোয়াল ঘরের পাশে দাফন করা হয়েছে।
হিন্দু না খ্রিস্টান এই তর্কে বৃদ্ধার মরদেহ সৎকারে গ্রামবাসীরা বাধা দেয়।
আশা রাণী গত কয়েকদিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন। বাড়িতেই তার চিকিৎসা চলছিল। এতে তার স্বাস্থ্যের অবস্থা খারাপের দিকে যাওয়ায় মূমুর্ষ অবস্থায় তাকে গত রোববার বিকালে ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে জরুরি বিভাগে পৌঁছানোর আগেই মারা যান আশা রাণী বলে জানান হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. ফিরোজ জামান জুয়েল। পরে বাড়িতে এনে রাতেই শশ্মানে সৎকারের জন্য প্রস্তুতি নিলে বাধা দেন শশ্মান কমিটির নেতা কালো বর্মনসহ অনেকে। কালো বর্মন দাবি করে বলেন আশা রাণী, তার মৃত স্বামী ও ছেলে-মেয়ে খিস্টান ধর্মে দীক্ষিত হয়েছে। তাই তাকে শশ্মানে সৎকার করতে দেয়া হবেনা। এদিক আশারাণীর মেয়ে দীপালি রাণী তা অস্বীকার করে বলেন,দীপালি ও তার ভাই ধর্মান্তরিত হলেও মা আশা রানী সনাতন ধর্মই পালন করতেন।
আশারাণীর চাচাতো ভাই ধীরেন দাস অভিযোগ করে বলেন, আমার বোনকে যখন বাড়ির অদূরের রাধা-উষা নামে শশ্মান ঘাটে সমাহিত করতে দিচ্ছিল না গ্রামবাসী। তখন আমরা অনেকের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরি। কিন্তু কোন ফল ফিলেনি। জনরোষের মুখে অবশেষে ‘আশারাণী’ কে গত সোমবার রাত ৯ টার দিকে গোয়াল ঘরের পাশেই কবরস্থ করা হয়েছে। এসময় প্রশাসনের কর্মকর্তারা এলাকায় ছিলেন। রুহিয়া থানা এলাকার ক্যাথলিক গির্জার ধর্মযাজক আনতনি সেন বলেন, ওই শশ্মানতো সরকারের। প্রশাসনের নিরবতার কারণেই আশা রাণীকে গোয়ালঘরের পাশেই কবরস্থ করাটা দু:খজনক ও অমানবিক।
বীর মুক্তিযোদ্ধা নরেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, প্রথম পরিচয় আমরা বাঙালি । এরপরেই ধর্ম। হিন্দু হোক,বৌদ্ধ হোক, আর খিস্টানই হোক সবার মরদেহ সমাহিত করার অধিকার আছে।
জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সহ-সভাপতি তপন কুমার ঘোষ বলেন, যেহেতু আশা রাণীকে দাহ করতে দেবে না ,তাই মৃতদেহ শশ্মানে নিতে বাধা দেয় স্থানীয়রা।
রহিমানপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান হান্নু জানিয়েছেন, গ্রামটির একদল মানুষ কবরস্থ করতে বাধা দেয়ায় সেখানে বিশৃংখলা সৃষ্টি হয়। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে আশা রাণী নামে ওই বৃদ্ধাকে তার ছেলের গোয়াল ঘরের নিকটে সমাহিত করা হয়েছে ।
সদর উপজেলা ইউএনও মো.বেলায়েত হোসেন বলেন ও গ্রামে আলাদা কবরস্থান প্রতিষ্ঠা করে সমাধানের চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
প্রসঙ্গত: ওই দাসপাড়া গ্রামের ১৬১ টি পরিবারের মধ্যে ১৫০ পরিবার সনাতন ধর্মাবলম্বী এবং ১১টি পরিবার খ্রিষ্টিয় ধর্ম পালন করেন।
Design & Developed BY: ServerSold.com
https://writingbachelorthesis.com
Leave a Reply