মোহাম্মদ মাসুদ বিশেষ প্রতিনিধি
কক্সবাজারের চকরিয়া থানাধীন বদরখালি ইউনিয়নের কুতুবদিয়াপাড়া গ্রামে টমটম চালক জিসান’কে পাশবিক নির্যাতন করে হত্যাকান্ডের আলোচিত ঘটনায় মামলা দায়েরের ১৩ ঘণ্টার মধ্যে মূলহোতা বাবু’সহ তিনজন আসামী র্যাব-১৫ কর্তৃক গ্রেফতার।
অদ্য ৩০ নভেম্বর রাত ০৩.৩০ টায় মহেশখালী থানাধীন মাতারবাড়ি পশ্চিম সিকপাড়া এলাকায় একটি চৌকস অভিযানে মামলা দায়েরের ১৩ঘন্টার মধ্যে মূলহোতা বাবু’সহ অন্যতম তিনজন আসামীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
২৭ নভেম্বর মধ্যরাত বদরখালী ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডস্থ কুতুবদিয়াপাড়া এলাকায় টমটম চালক জিসান’কে পাশবিক নির্যাতন করে হত্যার ঘটনা ঘটে। হত্যাকারীরা মূলত বাবু’র নেতৃত্বে গড়ে উঠা স্থানীয় একটি গ্যাং এর সদস্য। যার প্রত্যেক সদস্য ১৮ থেকে ২১ বছর বয়সী। গ্রেফতারকৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে ও স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত বাবু’র পিতা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়াতে সে গ্যাংটি নিয়ন্ত্রণ করতো। এই গ্যাং এর সদস্যরা মাদক ব্যবসা, চুরি, ছিনতাই, মারামারিসহ সকল ধরণের অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত ছিল। নিহত জিসান এই চক্রের রুবেল নামে একজন সদস্যের একটি অটো ভাড়ায় চালাতো। এই সুবাধে রুবেল প্রায়শই জিসানকে মাদক পরিবহনের জন্য চাপ দিত। কিন্তু জিসান তা করতে অস্বীকৃতি জানায়। ফলে জিসানের প্রতি এই চক্রের একটি ক্ষোভ তৈরী হয়। ঘটনার দিন জিসান রাত ১০ টার মধ্যে গাড়ি গ্যারেজে জমা দেওয়ার কথা থাকলেও সে যাত্রী নিয়ে চকরিয়াতে যাওয়াতে আসতে দেরী হয়। জিসান যখন অটোটি নিয়ে গ্যারেজে আসে তখন রুবেল জিসানকে চুরির অপরাধ দেয় এবং বাবু’সহ চক্রের অন্য সদস্যদের গ্যারেজে ডেকে নিয়ে চালক জিসানকে রাতভর কিল, ঘুষি, লাথিসহ লোহার রড ও কাঠের বাঠাম দিয়ে নির্মমভাবে পাশবিক নির্যাতন করে। একপর্যায়ে ভিকটিমের এর অবস্থা আশংকাজনক হলে তারা স্থানীয় মেম্বারকে কল দিয়ে ভিকটিমকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলে। পরবর্তীতে মেম্বার পরিবারের সদস্যসহ গ্যারেজে এসে ভিকটিমকে মুমূর্ষু অবস্থায় পায় এবং দ্রুত তাকে চকরিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নির্মমভাবে পাশবিক নির্যাতনের মাধ্যমে সংঘঠিত এই হত্যাকান্ডের ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ জাতীয় ও স্থানীয় পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ হওয়ার সাথে সাথে দেশজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। একই সাথে জড়িতদের গ্রেফতার ও হত্যার সুষ্ঠু বিচারের লক্ষ্যে ব্যাপক সমালোচনা ও এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ঘটনার পরবর্তীতে নিহতের পিতা বাদী হয়ে এজাহানামীয় ০৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৩/৪ জনকে আসামী করে চকরিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন, যার মামলা নং ৩৫/৫৫০ করে।
মামলার ধারাবাহিকতায় ছায়াতদন্তে ঘটনার সাথে জড়িত আসামীদের গোয়েন্দা তৎপরতা আটক করে।
আটক আসামিদের বিস্তারিত পরিচয়-(১) ফাহাদ বাবু (১৯)পিতা-মোঃ জাহাঙ্গীর, সাং-কুতুবদিয়াপাড়া, বদরখালি ইউনিয়ন, চকরিয়া, কক্সবাজার (এজাহারনামীয় ২নং আসামী)।(২) মোঃ সায়েম (২৩)পিতা-আবু তাহের টুক্কু, সাং-কুতুবদিয়াপাড়া, বদরখালি ইউনিয়ন, চকরিয়া, কক্সবাজার (এজাহারনামীয় ৩নং আসামী)।(৩) মোঃ মিজান (২০) পিতা-মোঃ ইসমাঈল, সাং-কুতুবদিয়াপাড়া, বদরখালি ইউনিয়ন, চকরিয়া, কক্সবাজার (সন্দিগ্ধ আসামী)।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা ঘটনার সাথে জড়িত বলে স্বীকার করে। আটক বাবু’র বাবা স্থানীয় প্রভাবশালী হওয়ায় সে একটি গ্যাং তৈরী করে। তার নেতৃত্বে পরিচালিত গ্যাং এর সদস্য সংখ্যা ১০-১৫ জন। সে তার বাবার প্রভাব খাটিয়ে গ্যাংটি পরিচালনাসহ গ্যাং এর সদস্যদের সমন্বয়ে মাদক ব্যবসা,চুরি, ছিনতাই, বিভিন্ন প্রজেক্ট/প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি করে আসছিল। এছাড়াও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আটককৃতদের অত্যাচারে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ,মাদক সেবনসহ মাদক ব্যবসায়ের সাথে জড়িতসহ তাদের উত্যক্তের শিকার হয়েছে স্থানীয় বিভিন্ন স্কুল/কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা।
আটক আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। তথ্য নিশ্চিত করেছেন,মোঃ আবু সালাম চৌধুরী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সিনিয়র সহকারী পরিচালক (ল’ এন্ড মিডিয়া)।
Design & Developed BY: ServerSold.com
https://writingbachelorthesis.com
Leave a Reply