মোহাম্মদ মাসুদ স্টাফ রিপোর্টার

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে চট্টগ্রাম-১০ আসনে তিন প্রতিদ্বন্দ্বী। তিনজনেই মাঠে সরব চষে বেড়াচ্ছেন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ও নির্বাচনী কার্যক্রমে। মহিউদ্দিন বাচ্চুর সাথে মনজুর আলম ও ফরিদ মাহমুদের জোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা। তিনজনেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অনুসারী প্রশ্ন কে হবে বিজয়ী?যা ব্যপক আলোচিত হচ্ছে পদপ্রার্থীদের অনুসারী ভোটার ও এলাকার মানুষের মাঝে। সেইসাথে প্রত্যেকেরই ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও গ্রহণ যোগ্যতায় আত্মবিশ্বাস রয়েছে। এবং ভোটারদের রায় ও জনসাধারণের ভালবাসায় প্রত্যেকেই বিজয়ী হবেন বলে দৃঢ় প্রত্যাশা। সেই বাস্তবতা ও ফলাফলের আশা আকাঙ্ক্ষা ও আস্থায় সময়ের অপেক্ষা মাত্র।

আজ সোমবার (১১ ডিসেম্বর) নির্বাচন কমিশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আপিল শুনানির পর ফরিদ মাহমুদের মনোনয়ন পত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়। তার মনোনয়নপত্র দাখিল করা এক শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর ত্রুটিপূর্ণ থাকার অভিযোগে বাতিল করেছিলেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল ও চার কমিশনার আপিল শুনানি করেন।

প্রত্যেকের সমর্থক ও অনুসারীরা মহিউদ্দিন বাচ্চুর সাথে মনজুর আলম ও ফরিদ মাহমুদের জোর প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হবে। নির্বাচন প্রচারণার পূর্ব প্রস্তুতি মতবিনিময় সভা সহ ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা ও সক্রিয়তায় সরব নির্বাচনী মাঠ। প্রত্যেকেই জনপ্রিরয়তা জনগণের আস্থা ও ভালোবাসায় আশাবাদী এবং ভোটেও বিজয়ী হবেন বলে জানিয়েছেন। অতীতের সেচ্ছাসেবক মানবিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও সেবামূলক কার্যক্রমের প্রতিফল হিসেবে নির্বাচনে জয়ী হবেন আশাবাদী। নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে বিজয়ী হবে বলে প্রত্যাশা ও দৃঢ় আত্মবিশ্বাস। প্রত্যেকের ব্যক্তিত্ব-কৃতিত্ব,নিজগুণে,নিজস্ব সবস্থান, গ্রহনযোগ্যতা,সামাজিক কর্মকান্ডে স্ব-স্ব ভোটার ও জনপ্রিয়তাকে প্রতিদ্বন্দ্বীরা প্রভাবিত করতে পারবে না কোন ভাবেই।এমনটাই দাবি প্রার্থী ও অনুগত নেতাকর্মী অনুসারী ও সমর্থকদের।

এর আগে গত উপ-নির্বাচনে দলীয় পতিকে নৌকার পদপ্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চু প্রার্থী প্রতিযোগিতা লড়াইয়ে ২৯জনকে ডিঙ্গিয়ে দলীয় পতিকে নির্বাচিত হওয়া। মোট ভোটের ভোট গ্রহণ ছিল মাত্র শতকরা ১১℅ভাগ ভোটের শতকরা ৯২℅ ভাগ ভোটে জয়ী হয় মহিউদ্দিন বাচ্চু।
সেইসাথে রাজনৈতিকভাবে ব্যাপক আলোচিত হয়।
তিনি এবারো দলীয় পতিকে বিজয়ী প্রত্যাশী ও জনগণের ভালোবাসায় সফল হবেন বলে দৃঢ় আত্মবিশ্বাস দ্বাদশ নির্বাচনেও জয়ী হবেন দাবি সমর্থকদের।

একই দলের অনুসারী ত্রিমূখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে এমনটাই ধারনা করছেন অনেকেই। আলোচনা সমালোচনায় গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে অত্র আসনের ভোটার জনসাধারণ ও মানুষের মাঝে। প্রার্থী ও অনুসারীদের দাবি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ অংশগ্রহনমূলক নির্বাচন হলে তাদের মনোনীত প্রার্থীই জয়ী হবেন।

ভোটার ও জনগনের উদ্দেশ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ মনজুরুল আলম বলেন,বর্তমানে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ৭জন রয়েছেন। আমি একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জনগণের কাছে ভোট প্রার্থনা করছি। মনে-প্রাণে আমি একজন বঙ্গবন্ধুর অনুসারী। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে আমার বাপ-দাদা সবাই ছিলেন। আমার বাবা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে একজন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারী ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর একটি স্বপ্ন ছিল এদেশের মানুষের অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থানের সুব্যবস্থা করা। তাঁর সেই আদর্শকে আমি লালন করে যাচ্ছি। নির্বাচনে জয়ী হলে আমি ৮টি ওয়ার্ড নিয়ে চট্টগ্রাম-১০ আসনের উন্নয়নে নিজেকে উৎসর্গ করবো।

নির্বাচনী প্রস্তুতি ও মতবিনিময় সভায় নৌকা প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চু বলেন,সন্ত্রাস মৌলবাদের অগ্নি সন্ত্রাস বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম। আমি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একজন তৃণমূল পর্যায়ের কর্মী ছিলাম। দীর্ঘ ৪২ বছর পূর্বে আমি ছাত্রলীগে যোগ দিয়েছিলাম। যাদেরকে আমি রাজনৈতিক আইডল হিসেবে দেখেছি তারা সকলে আমার সাথে আছেন। ভুল ভুলের জায়গায় না রেখে একে অপরকে সংশোধনের সুযোগ দিয়ে সুন্দর পথকে আরো সুন্দর করতে চাই।রাজনীতির শুরু হতে আনন্দ-বেদনা কঠিন পথ পাড়ি দিয়েছি।বিত্তশালী শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকলে। কিন্তু যাদের সাথে চরমভাবে আদর্শ বৈপরীত্য আছে। ক্লাসে বন্ধুত্ব রচনা হয়েছিল। এখন মাঠে কাজ করি সেই বন্ধুত্ব পরিষ্কারভাবে বাদ দিয়েই। যেখানে শত্রুতা করা দরকার শত্রুতা করেই কিন্তু আমরা আজ বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত করেছি। এটি একেবারে বাস্তবতা। আমি যেখানে বড় হয়েছি শিক্ষা অর্জন করেছি সেখানে শুধু ছাত্রলীগের কর্মী ছিল না। বিএনপির জামাতের কর্মীও ছিল। আমাদের ছাত্রত্বের ভাতৃত্বের একটা বন্ধন বন্ধুত্ব ছিল। সম্পর্কের বন্ধুত্বকে উপেক্ষা করে। যার সাথে আমার প্রতিদিনের সামাজিকতা হয়। সাথে আমার আদর্শের বৈপরীত্ত আছে। যখন আমি লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাব তখন আমি তাকে যতটুক সম্ভব পাশ কাটানো দরকার ততটুকুই আমাদের পাশ কাটাতেই হবে। সেই কাজটি যেন আমরা করি। পথে-ঘাটে দেখা হয়ে গেলে সালাম বিনিময় করা কিন্তু অপরাধের জায়গা নয়। তাই বলে যা খুশি তা করতে পারব তা কিন্তু নয়। আমাদের লক্ষচ্যুত হব তা কিন্তু নয়। এমন সামাজিকতা থেকে দূরে থাকা বিরোধীতা করারও দরকার আছে। স্বতন্ত্র প্রার্থীর কোরআন খতম নামে মসজিদে গিয়েছে। এখানে আমাদের অনেক নেতারা উপস্থিত ছিলেন। অনেকে আমাকে মোবাইলে সেই ছবিগুলো পাঠিয়েছে। তে আমি খুব ব্যতীত হইনি।

মনোনয়ন ফিরে পাবার পর স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরিদ মাহমুদ বলেন, ‘মহান সৃষ্টিকর্তার দয়া, আমার মায়ের দোয়া ও জনগণের ভালোবাসা আছে আমার প্রতি। সংগঠনের অসংখ্য নেতাকর্মী চায়,আমি নির্বাচন করি। সবার দোয়ায় আমি ন্যায়বিচার পেয়েছি। আগামী ৭ জানুয়ারী জনগণ আমাকে ভালোবাসার প্রতিদান দেবেন,এটা আমার বিশ্বাস।’ আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. মহিউদ্দিন বাচ্চু’র সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফিরলেন মনোনয়ন বঞ্চিত ফরিদ মাহমুদ। চট্টগ্রামে যুবলীগের রাজনীতিতে দু’জন একই পথে থাকলেও সংসদ নির্বাচনে এসে তাদের আলাদা যাত্রার বিষয়টি দৃশ্যমান হলো।

উল্লেখ্য: ২০০৮ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিন দফা অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১০ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আফছারুল আমীন। চলতি বছরের ২ জুন তিনি মারা যান। শূন্য আসনে ৩০ জুলাই অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মহিউদ্দিন বাচ্চু। মহিউদ্দিন বাচ্চু ২০১৩ সালে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পান। যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে তার সঙ্গে ছিলেন ফরিদ মাহমুদ। উভয়ই ছাত্রলীগের সাবেক নেতা এবং প্রয়াত রাজনীতিক এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী। উভয়ে বিলবোর্ড ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন। ২০২২ সালে সম্মেলনের পর চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগ থেকে বিদায় নিয়ে দু’জন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন।

আফছারুল আমিনের মৃত্যুর পর অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ফরিদ মাহমুদও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। এবারও মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হন এ আসনে বেশ কয়েকবছর ধরে সামাজিক ও রাজনৈতিক বিভিন্ন কার্যক্রমে যুক্ত থাকা এ নেতা। তবে দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা স্বতন্ত্র প্রার্থীতা উন্মুক্ত ঘোষণা করলে তিনি নির্বাচনের মাঠে আসেন।

সাবেক মেয়র শিল্পগোষ্ঠী মোস্তফা হাকিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আওয়ামী ঘরানার মনজুর আওয়ামী লীগের সমর্থনে তিনবার নগরীর উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন। শিল্পগোষ্ঠী মোস্তফা হাকিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আওয়ামী ঘরানার মনজুর আওয়ামী লীগের সমর্থনে তিনবার নগরীর উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন। রাজনীতিতে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ‘ভাবশিষ্য’ হিসেবে পরিচিত মনজুর গুরুর সঙ্গে ‘ভুল বোঝাবুঝি’র প্রেক্ষাপটে ২০১০ সালে বিএনপিতে যোগ দিয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৫ সালে আবার মেয়র পদে দাঁড়িয়ে হেরে যাবার পর বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। এরপর তিনি আওয়ামী লীগে সক্রিয় হন। চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং,হালিশহর,পাহাড়তলী ও খুলশী) মহিউদ্দিন বাচ্চুর প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ফিরলেন ফরিদ মাহমুদ অন্যদিগে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত আরও একজন হেভিওয়েট নেতা এম মনজুর আলম। ত্রিমুখী নির্বাচনী যুদ্ধে কে বিজয়ী হবে তার প্রতিফলে অপেক্ষায় ৭ই জানুয়ারি ভোটের মাধ্যমে।