মোহাম্মদ মাসুদ
চট্টগ্রামের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী শীর্ষ সেবা প্রতিষ্ঠান মানসম্মত সেবা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত। শিশু ও মাতৃ সদন চিকিৎসা কেন্দ্রে শীর্ষ প্রতিষ্ঠান। জেমিসন রেড ক্রিসেন্ট মাতৃসদন হাসপাতাল। নানা অনিয়ম দুর্নীতি ও অনিয়মের দায়ে ডুবতে থাকা সেবা প্রতিষ্ঠানকে উদ্ধার। দুর্নীতিমুক্ত করে মানসম্মত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করে আয় বৃদ্ধি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) সকালে জেমিসন হাসপাতালে এক সংবাদ সম্মেলনে জেমিসন রেড ক্রিসেন্ট মাতৃসদন হাসপাতালকে দুর্নীতিমুক্ত করে মানসম্মত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করে আয় বৃদ্ধি করা হয়েছে।বললেন অত্র প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান। রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চট্টগ্রাম জেলা ইউনিটের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম।
তিনি বলেন, দুর্নীতিতে ডুবন্ত ও লুটপাটের আখড়ায় পরিণত হওয়া জেমিসন রেড ক্রিসেন্ট মাতৃসদন হাসপাতালকে দুর্নীতিমুক্ত করে মানসম্মত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করে আয় বৃদ্ধি করা হয়েছে। এক সময় বছরে সাত কোটি টাকা আয় হলেও বিগত এক বছরে সেই আয় বৃদ্ধি পেয়েছে ৬০ শতাংশ। দুর্নীতি ও অনিয়মের দায়ে ডুবতে থাকা জেমিসন রেড ক্রিসেন্ট মাতৃসদন হাসপাতালটি ঘুরে দাঁড়িয়েছে বলে দাবি করেছেন বর্তমান চেয়ারম্যান।
এ সময় জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে আগে প্রতি মাসে ৫৫ লাখ টাকা আয় হলেও বর্তমান কমিটি দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই আয় মাসে এখন ১ কোটি ৮ লাখ টাকা আয় হয়েছে। এক বছর আগে দায়িত্ব নেওয়ার সময় হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৮ মাসের বেতন-ভাতা বকেয়া ছিল। আগের কমিটির সেই ৮ মাসের বকেয়া থেকে ইতোমধ্যে নিয়মিত বেতন ভাতা প্রদানের পাশাপাশি বকেয়া ৬ মাসের বেতন পরিশোধ করা হয়েছে। এখন প্রভিডেন্ট ফান্ড সঠিকভাবে জমা হচ্ছে। যারা অবসরে যাচ্ছেন তাদের পাওনা যথাযথাভাবে পরিশোধ করা হচ্ছে। তাছাড়া গাড়ি ব্যবহারের নামে অপচয় রোধ করে শুধু বিগত ২০২৩ সালে প্রায় ১৫ লাখের বেশি টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব হয়েছে।
বর্তমানে হাসপাতালটি শতভাগ দুর্নীতিমুক্ত হওয়ায় আগামী বছর ১৫ কোটি টাকা আয় করা সম্ভব বলে বিশ্বাস করি। এসব অসম্ভব কাজগুলো সম্ভব হয়েছে হাসপাতালের লুটপাট বন্ধ করে প্রতিটি বিভাগে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে পারায়। সনদ জালিয়াতি করে অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া ও অন্যান্য অনিয়মে যুক্ত ৮ জন কর্মচারীকে তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে চাকুরিচ্যুত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রসংঙ্গ: জেমিসন রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালটি চট্টগ্রাম জেলা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির একটি প্রতিষ্ঠান। জেলা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান পদাধিকার বলে এই হাসপাতালের সবকিছু দেখাশোনা করেন। তবে ২০০৯ সাল থেকে গত ২ জানুয়ারি পর্যন্ত হাসপাতালটির সবকিছু তদারকি করেন সোসাইটির তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ডা. শেখ শফিউল আজম। সোসাইটির নতুন কমিটি দায়িত্ব নেয় গত ৩ জানুয়ারি। ওই দিন থেকে জেমিসন হাসপাতাল তদারকির দায়িত্বেও পরিবর্তন আসে।
রেড ক্রিসেন্ট কেন্দ্রীয় কমিটি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত যা চট্টগ্রাম জেলা রেড ক্রিসেন্ট এর কমিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালনার দায়িত্বে নিয়মিত কার্যক্রমে পরিচালিত হয়।দীর্ঘদিন ধরে পূর্বের দায়িত্বশীলদের গাফলিতে অবহেলা নিষ্ক্রিয়তা নানা কারণে হাসপাতালটি পড়ে দুর্নীতিবাজ লুটপাটের চক্রের ফাঁদে। বর্তমান চেয়ারম্যানের সক্রিয়তা ও দায়িত্বশীলদের সহযোগিতায় বিগত অনিয়ম উঠে আসে। যা বিগত দীর্ঘ ১৩ বছরের হাসপাতালে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে।
নতুন কমিটির সাম্প্রতিক তদন্তে বছরের পর বছর কাজ না করে বেতন তোলার ঘটনাও প্রকাশ্যে এসেছে। অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষার তথ্য বলছে, ডাক্তার ও কর্মচারী নিয়োগে যোগ্যতার বিষয়টি একদমই গুরুত্ব পায়নি। সোসাইটির নিয়োগ প্রক্রিয়াও অনুসরণ হয়নি। ২৩ কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ব্যক্তিগত ফাইলে জাল সনদ, বয়স কমিয়ে দেখানোসহ নানা অসামঞ্জস্যতা ধরা পড়ে।
বিগত ১৩ বছরের হাসপাতালে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে উল্লেখ করেন পেয়ারুল ইসলাম। গত ১৩ বছর দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা প্রতি বছর ৩০ লাখ টাকায় বেড শিট, দরজা-জানলার পর্দা, ফোম-মেট্রেস ক্রয় করেছে। অথচ গত এক বছরে এসব জিনিসপত্র কেনা হয়েছে মাত্র তিন লাখ টাকায়। বিগত পরিষদ লাখ লাখ টাকার জিনিসপত্র কিনলেও কখনও যাচাই বাছাই করেনি। আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর বেড শিট, পর্দা কেনার ভাউচারগুলো যাচাই করি। ভাউচারে থাকা দোকানের অস্তিত্ব আমরা খুঁজে পাইনি। হিসেব করে দেখেছি বিগত বছরগুলোতে একটি বেড শিট-পর্দার দাম ১৯ হাজার টাকার মতো পড়েছে। সংবাদ সম্মেলনে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির কর্যনির্বাহী কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বর্তমান পরিচালনা কমিটির সদস্য ও চেয়ারম্যান দায়িত্বশীলরা জানান,এত অনিয়মের বিরুদ্ধে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অবহিত করা হয়েছে তারা ব্যবস্থা নেওয়া আশ্বাস দিয়েছে। মানবিক হাসপাতাল স্বেচ্ছাসেবী সেবার আড়ালে দানবীয় কায়দায় লুটপাট চিকিৎসাসেবা নামে মুখোশধারী সেবাখেঁকোদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি দায়িত্বশীল ও সাধারণের।
তদন্ত কমিটি ও উচ্চ তদন্তের নাম ভাঙ্গিয়ে নানা অজুহাতে এসব অপরাধীরা থেকে যায় আড়ালে।সুকৌশলে রাজনৈতিক ছত্রছায়া অপকামতার অপব্যবহারে থেকে যায় ধরাছোঁয়া নাগালের বাহিরে।বিগত সেবা প্রতিষ্ঠানের অনিয়মকারীদের দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি ও প্রত্যাশা সাধারণ জনগণের।
Design & Developed BY: ServerSold.com
https://writingbachelorthesis.com
Leave a Reply