সৈয়দ মুনিরুল হক নোবেল:
ভারত সরকারের পক্ষ থেকে জামালপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালকে উপহার হিসেবে দেওয়া দেড় কোটি টাকা মূল্যের অ্যাম্বুলেন্সটি কাজেই আসছে না। বরং অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে আইসিইউ সুবিধাসংবলিত বিশেষায়িত অ্যাম্বুলেন্সটি। গত দুই বছর ধরে হাসপাতাল চত্বরের একটি ছাউনির নিচে পড়ে আছে এটি। এতে অ্যাম্বুলেন্সটির আয়ুষ্কাল নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বলা বাহুল্য, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০২১ সালের মার্চে রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশে আসেন। তখন ১শ ৯টি আইসিইউ–সুবিধার অ্যাম্বুলেন্স উপহার দেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি। ওই বছরের ডিসেম্বরে জামালপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে একটি অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হয়। এরপর থেকে কখনোই অ্যাম্বুলেন্সটিতে রোগী বহন করতে দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট অনেকেই। অ্যাম্বুলেন্সটির ব্যাপারে হাসপাতালে কয়েকজন রোগীর স্বজনের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা জানান, মুমূর্ষু রোগীদের কথা চিন্তা করে হলেও ওই নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) সুবিধার অ্যাম্বুলেন্সটি চালু করা দরকার। তাহলে রোগী ও স্বজনেরা অনেকটাই স্বস্তি পেতেন।
জামালপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (এডি) মো. মাহফুজুর রহমান সোহান অ্যাম্বুলেন্সটির বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি হননি। তবে তিনি বলেন, অ্যাম্বুলেন্সটি ঠিকই আছে। বিশেষায়িত এ অ্যাম্বুলেন্স চলাচলে জনবল লাগে। সেটা নেই। তা ছাড়া এ অ্যাম্বুলেন্সে রোগী বহন খুবই ব্যয়বহুল।
গত ২৯ জানুয়ারি দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, জামালপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের বহির্বিভাগের পূর্ব পাশের একটি টিনশেডের মধ্যে অ্যাম্বুলেন্সটি পড়ে আছে। বাংলাদেশ-ভারতের পতাকাসংবলিত অ্যাম্বুলেন্সটির গায়ে ধুলাবালির আস্তরণ পড়ে গেছে। এর পাশে রাখা আছে আরও একটি ভাঙাচোরা অ্যাম্বুলেন্স। হাসপাতালের একজন কর্মচারী বললেন, এক দিনের জন্যও এই অ্যাম্বুলেন্সে কোনো রোগী বহন করতে দেখেননি তিনি। সব সময় অ্যাম্বুলেন্সটি ওই শেডের নিচে পড়ে থাকতে দেখেছেন। এতে অ্যাম্বুলেন্সটির বিভিন্ন সরঞ্জাম নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের এক আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা বলেন, এই হাসপাতালে আইসিইউ চালু নেই। মূলত এ কারণে ওই অ্যাম্বুলেন্সটির ব্যবহার হয় না।
জানতে চাইলে জামালপুর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, ‘প্রায় দিনই মুমূর্ষু রোগীদের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। অথচ এই হাসপাতালে আইসিইউ উদ্বোধন করা হয় আট বছর আগে। লাইফ সাপোর্টের ভেন্টিলেটর, মনিটরসহ প্রয়োজনীয় সব আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম রয়েছে সেখানে। এরপরও উদ্বোধনের পর থেকে আইসিইউ কক্ষটি তালাবদ্ধ রয়েছে। এ কারণে মুমূর্ষু রোগীদের আইসিইউ সাপোর্টের জন্য বাধ্য হয়ে জেলার বাইরে অন্য হাসপাতালে নিতে হয়।’
জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, ভারত থেকে ওই অ্যাম্বুলেন্স পাওয়ার পর অনেকেই স্তস্তি প্রকাশ করেছিলেন। তবে দুই বছরেও সেই অ্যাম্বুলেন্সটি ব্যবহার হয়নি। দুই বছর ধরে অ্যাম্বুলেন্সটি অযত্ন ও অবহেলায় পড়ে থাকা অত্যন্ত দুঃখজনক। ওই অ্যাম্বুলেন্সটি চালু করার বিষয়ে ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় আলোচনা করব।
Design & Developed BY: ServerSold.com
https://writingbachelorthesis.com
Leave a Reply