সৈয়দ মুনিরুল হক নোবেল:
মুক্তাগাছার তনু ইস্যুতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে রীতিমত ঝড় বইতে শুরু করেছে।
ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলা যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসরাত জাহান তনু ইস্যুতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ঝড় যেন থামছেই না। প্রতিদিনই বেরিয়ে আসছে তার নানা অজানা কাহিনী। তাকে নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা তিনভাগে বিভক্ত হয়েছেন। এক পক্ষ থলের বিড়াল বের করতে আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছেন। আরেক পক্ষ তনুকে বাঁচাতে নিজেদের সম্মানের বারোটা বাজাচ্ছেন। কেউ কেউ আবার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। অন্যদিকে ‘কিছুটা সুন্দরী’ তনু ইস্যুতে ময়মনসিংহ ও মুক্তাগাছার আওয়ামী ঘরানার লোকজনও দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছেন। কেন্দ্রীয় যুব মহিলা লীগ অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ইসরাত জাহান তনুকে বহিষ্কার করে। এরপরই এক এক করে বেরিয়ে আসছে অজানা সব কাহিনী। দাম্পত্য সম্পর্ক থাকার পরও দ্বিতীয় স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা ধর্ষণ মামলা দায়ের করে দীর্ঘ ৩৭ দিন জেল খাটিয়েছেন বহু পুরুষে আসক্ত তনু। এর আগে প্রথম স্বামীকেও জেল খাটানোর তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা যায়, কোনো প্রকার সম্মেলন ছাড়াই স্বামী খায়রুল ইসলাম মনির বিশেষ তদবিরে ইসরাত জাহান তনু ১৮-০৯-২০২২ তারিখে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি নিযুক্ত হন। এর আগে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সুবিধার জন্য মুক্তাগাছা শহরের কালা মিয়া হোটেলের পেছনে বাসা ভাড়া নিয়ে দেওয়া হয় তনুকে। তনু পদ পেয়েই বখে যেতে শুরু করেন। পরকীয়ার সম্পর্কে জড়ান প্রথম স্বামী মেহেদী চিশতী, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, বাবুল ও কয়েক বখাটের সাথে। এদের সাথে হাতেনাতে ধরা পড়াসহ কয়েকদফা দেনদরবারের ঘটনাও ঘটে। স্বামী মনি চাকরি ও ব্যবসা নিয়ে ঢাকায় ব্যস্ত থাকার সুযোগ নেন তনু। পরিচয় হয় ময়মনসিংহের আরেক বখাটে জাহিদুল ইসলাম নিশাতের সাথে। তাকে নিয়ে ঢাকার রেডিসন ও রিজেন্সী এবং ময়মনসিংহের হোটেলে রাত কাটিয়ে স্বামীর কাছে ধরা পড়েন। এরপরই ঘটে যতসব বিপত্তি। হোটেলে রাত কাটানোর প্রমাণ নিয়ে ১৫ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখে উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরের ভাড়া বাসায় বৈঠক বসে। জরুরি সেবার ৯৯৯ নম্বরে কল দিয়ে তনু তুলকালাম কাণ্ড ঘটান। কয়েক ঘণ্টা বৈঠকের পর পুলিশ ফিরে যায়। মুক্তাগাছায় ফেরার কথা বলে তনু পরকীয়ার নায়ক নিশাতকে নিয়ে তুরাগ থানায় গিয়ে স্বামী মনির বিরুদ্ধে মিথ্যা ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। সে মামলায় দীর্ঘ ৩৭ দিন কারাগারে আটক ছিলেন তার দ্বিতীয় স্বামী খায়রুল ইসলাম মনি।
সূত্র জানায়, মুক্তাগাছা উপজেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি হওয়ার পর থেকেই ইসরাত জাহান তনুর মুখোশ উন্মোচন হতে থাকে। একেক করে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়ানোর পাশাপাশি নানান বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িয়ে পড়েন তিনি। এ নিয়ে বহু দরবার হয়। তনু প্রথমে ২০১৬ সালে ফরিদপুর জেলা শহরের প্রতারক মেহেদী চিশতীকে বিয়ে করেন। বহু বিয়ে করার কারণে মেহেদীর সাথে তার ডিভোর্স হয়ে যায়। মেহেদী এখন পর্যন্ত দেড় ডজন বিয়ে করেছেন। বিয়ের নামে নারীদের সাথে প্রতারণা করায় মামলাও রয়েছে তার নামে। সূত্রমতে, দীর্ঘ ১২ বছর আগের পরিচয়ের সূত্র ধরে ২০১৮ সালে আবারো নতুন করে দেখা এবং সখ্যতা হয় মনি-তনুর। উভয় পরিবারের সম্মতিতে ০১ মার্চ ২০১৯ তারিখে তারা বিয়ে করেন। তনুর বাবা এমবিবিএস ডাক্তার ছিলেন। তিনি টাংগাইলের ঘাটাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চাকরি করতেন। তখনই তাদের সাথে মনির ভালো জানাশোনা হয়। বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও সোশ্যাল মিডিয়ায় তনুকে জড়িয়ে খবর ও তথ্য প্রচারের পর ৪ এপ্রিল ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন তনু। আপত্তিকর ভিডিও, ছবি ও তথ্যের বিষয়ে স্বামী মনিকে দায়ী এবং তাকে ডিভোর্স দেওয়ার দাবি করা হয়। গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে পুরো ঘটনা খোলাসা করতে তনুর দ্বিতীয় স্বামী ভুক্তভোগী খায়রুল ইসলাম মনি শনিবার পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেন।
খায়রুল ইসলাম মনি সংবাদ সম্মেলনে জানান, বিয়ের পর স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকার উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের ভাড়া বাসায় থাকতেন। অগোচরে একাধিক যুবককে বাসায় নিয়ে তনু পরকীয়ায় মেতে থাকতেন। তাদের মধ্যে রানা, সবুজ ও জাহাঙ্গীর অন্যতম। তনু হাতেনাতে ধরাও পড়েন। দেনদরবারের ভয়ে পরকীয়ার নায়ক রানার সহযোগিতায় ট্রাকে করে বাসার মালামাল নিয়ে মুক্তাগাছায় চলে আসেন তনু। প্রথম স্বামী মেহেদী চিশতীকে নিয়ে তনু মুক্তাগাছায় বসবাস করতে থাকেন। আগের কুকর্মের জন্য ক্ষমা চেয়ে আবারো মনির সাথে মিশেন তনু। ২২ আগস্ট ২০২১ তারিখ মধ্যরাতে মেহেদীর সাথে আপত্তিকর অবস্থায় তনু ধরা পড়েন। পুলিশ ও বাড়ির মালিকের উপস্থিতিতে তার মা সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে ঘটনা মিটিয়ে ফেলেন। অঙ্গিকারনামা রেখে মেহেদীকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ঘটনাটি সে সময় টক অব দ্য টাউনে পরিণত হয়েছিলো। পরবর্তীতে রাজনীতি শেখার কথা বলে বাবুল নামের ৬০ বছরের ব্যক্তির সাথে তনুর সখ্যতা হয়। চলতে থাকে পরকীয়া। বাবুলের প্ররোচণায় মনিকে ডিভোর্স দিয়ে ১৮ জুলাই ২০২২ তারিখে আদালতে দেনমোহরের মামলা করেন তনু। মুক্তাগাছার পৌর মেয়র আলহাজ্ব বিল্লাল হোসেন সরকারের বাসায় ডিভোর্স নিয়ে কয়েকবার দরবার হয়। ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখ রাতে মায়ের উপস্থিতিতে তনু ভুল স্বীকার করে নিয়ম অনুযায়ী ডিভোর্স প্রত্যাহার করে নেন। মুক্তাগাছার কমিটি থেকে বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করানোর জন্য স্বামী মনির কাছ থেকে ২ লাখ টাকা দাবি করেন। ওই বেঠকে তনু জানান, কেন্দ্রের নারী নেতাদের নগদ টাকা, দামী শাড়ী এবং মুক্তাগাছার মন্ডা উপহার দিতে হবে। সূত্রমতে, বৈঠকের রাতে এবং আগের দিন ২ এপ্রিল রাতে ইসরাত জাহান তনু তার সর্বশেষ পরকীয়ার নায়ক জাহিদুল ইসলাম নিশাতের খিলক্ষেত নিকুঞ্জ-২ এর ভাড়া বাসায় ছিলেন।
সেখান থেকেই সব কিছুর ব্যবস্থা করে সকলের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে নেওয়ার জন্য ৪ এপ্রিল ময়মনসিংহ নগরীতে ফিরে সংবাদ সম্মেলন করেন।
Design & Developed BY: ServerSold.com
https://writingbachelorthesis.com
Leave a Reply