
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের পূবাইল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আগামী ২১ নভেম্বর রাতে বিচার গান বা বাউলগান আয়োজনকে ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পুরো পূবাইল এলাকা।
বার্ষিক পরীক্ষার এই সময়ে রাতব্যাপী এমন অনুষ্ঠানে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটবে বলে আশঙ্কা করছেন অভিভাবক, শিক্ষক ও স্থানীয় জনগণ।
শতাধিক স্কুল–মাদরাসা ও কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর পড়াশোনার ক্ষতির আশঙ্কায় এলাকাবাসী অবিলম্বে অনুষ্ঠানটি স্থগিতের দাবি জানিয়েছেন এবং প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের এক কর্মকর্তা জানান, বিদ্যালয় মাঠ জনস্বার্থে ব্যবহৃত এলাকা। পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থীদের ক্ষতির কারণ হলে অনুষ্ঠান স্থগিত বা বাতিল করা হবে।
রাতভর সাউন্ডে বই খোলা যায় না উল্লেখ করে শিক্ষার্থীদের অভিভাবক রহিমা বেগম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমার ছেলে এসএসসি পরীক্ষার্থী। সারারাত মাইক বাজলে ওর পড়া অসম্ভব হয়ে যায়। প্রশাসন যদি আগে থেকেই ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে আমাদের বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।
স্থানীয় ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, বছরের এই সময় পড়াশোনার মৌসুম। এমন সময়ে রাতভর গানের আয়োজনের কোনো যৌক্তিকতা নেই। শুধু শিক্ষার্থী নয়, বয়স্ক ও অসুস্থরাও ভোগান্তিতে পড়বেন।
পূবাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, বিদ্যালয়ের মাঠে পরীক্ষার সময় মাইক বাজিয়ে গানের আসর বসানো সম্পূর্ণ শিক্ষা–বিরোধী কাজ। এতে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যাবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পার্শ্ববর্তী মাদরাসার এক শিক্ষক জানান, আমাদের হেফজখানার ছেলেরা সারারাত শব্দে ঘুমাতে পারে না। এটি শুধু সাংস্কৃতিক নয়, সামাজিক ব্যাধিতে রূপ নিচ্ছে।
রাজনৈতিক রঙে বিতর্ক বাড়ছে ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি করা হয়েছে গাজীপুর–৫ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক একেএম ফজলুল হক মিলনকে।
তবে বিএনপির বেশ কয়েকজন স্থানীয় নেতা অভিযোগ করে বলেন, কিছু ব্যক্তি লিডারকে ভুলভাবে বুঝিয়ে প্রধান অতিথি করেছে, যাতে পরীক্ষার সময় আয়োজন করে জনগণ ও অভিভাবকদের ক্ষেপিয়ে তোলা যায়,এর পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে।
আয়োজকদের একজন বলেন, আমরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ধরে রাখতে বাউলগান করছি। এটি কোনো রাজনৈতিক অনুষ্ঠান নয়। শব্দের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখব। তবে পরীক্ষার্থীদের বিঘ্ন ঘটবে না।
অন্য আয়োজক মামুন মিয়া বলেন, জানুয়ারিতে ওয়াজ মাহফিল করে ধান্ধা ও ব্যবসা করবে সাংঘাতিক(সাংবাদিক) তখন কেউ কিছু বলে না। আমরা বাউলগান করলে দোষ?
তবে এলাকাবাসী বলছে, আগের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে— এমন আশ্বাসে কোনো কাজ হয় না; শেষ পর্যন্ত সারারাত সাউন্ডে ঘুমানো যায় না।
পূবাইল থানার ওসি মোল্লা মো.খালিদ হোসেন বলেন, আমরা বিষয়টি জেনেছি। পরীক্ষার সময় ও শব্দদূষণের বিষয় বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অনুমোদনের আগে সব কিছু যাচাই করা হচ্ছে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কমিশনার জাহিদুল হাসান বলেন, শিক্ষার্থীদের স্বার্থে প্রশাসন দায়িত্বশীল ভূমিকা নেবে। অনুমোদন ছাড়া এমন কোনো অনুষ্ঠান করতে দেওয়া হবে না।
নাগরিকদের একক দাবি -শিক্ষার স্বার্থে পরীক্ষার সময় পূবাইল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে রাতব্যাপী কোনো অনুষ্ঠান চলতে দেওয়া যাবে না।
অভিভাবক, শিক্ষক ও সচেতন নাগরিকেরা এক কণ্ঠে বলছেন— এমন আয়োজন শুধু শিক্ষার্থীদের মনোযোগ নষ্ট করছে না, বরং সমাজে বিশৃঙ্খলা ও নৈতিক অবক্ষয়ের জন্ম দিচ্ছে।প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ক্ষোভ আরও তীব্র আকার ধারণ করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
Leave a Reply