
সেলিম মাহবুবঃ
লাখাইয়ে শিল্প কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যে সুতাং নদীর পানি যেন প্রাণ হারিয়ে ফেলেছে। নদীতে স্বচ্ছ পানির কোন অস্তিত্ব নেই আছে শুধু শিল্প কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যরে কালো কুচকুচে পানি। এক সময়ের খরস্রোতা এ নদীটি এখন মৃতপ্রায়। দীর্ঘদিন ড্রেজিং না করা ও শিল্প কারখানার বর্জ্য এ নদীটিকে মরণব্যাধিতে আক্রান্ত করেছে। এতে অস্তিত্ব হারাচ্ছে এ নদীটি। শিল্প বর্জ্যের দূষণে নদীটি এখন দুঃখ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে নদীটি এক সময় মানুষের নিঃস্বার্থ উপকার করে যেত সেই নদীটিই এখন মৃত্যুর ফাঁদ।
এর প্রধান কারণ কিন্তু কোম্পানীগুলোতে নিয়মিত ইটিপি (বর্জ্য শোধনাগার) ব্যবহার না করা। ফলে মারাত্মক দূষণে পানি বিষাক্ত হয়ে মরে যাচ্ছে নদীর মাছ। এতে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন স্থানীয় কয়েক হাজার জেলে। অন্যদিকে চাষাবাদে দুর্গন্ধযুক্ত বিষাক্ত পানি ব্যবহারের কারণে নষ্ট হচ্ছে জমির ফসল।
এছাড়া নদীর পানি ব্যবহার করে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছেন এলাকাবাসী। নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে ইচ্ছে মত কোম্পানীগুলো পরিচালিত হচ্ছে। আর যাদের এসব দেখভাল করার কথা সেই পরিবেশ অধিদপ্তর লোকজন যেন কিছুই দেখছে না। মনে হয় কোম্পানীগুলোর এসব অনিয়ম দেখার যেন কেউ নেই।
সুতাং নদী বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ি অঞ্চল থেকে উৎপত্তি লাভ করে হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে লাখাই উপজেলার মাদনা এলাকায় হয়ে কিশোরগঞ্জে মেঘনার শাখা কালনী নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। এর দৈর্ঘ্য ৮২ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৩৬ মিটার।
সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও জনপ্রতিনিধিদের নজরদারীর অভাবে বহমান এ নদীটি কালের আবর্তে বিলীন হতে চলেছে। পাহাড়ি ঢল ও অতি বর্ষণের ফলে ভারত থেকে আসা উজানের পানি ও পলি মাটিতে ভরাট হয়ে নাব্যতা হারিয়েছে নদীটি।
শায়েস্তাগঞ্জের অলিপুর শিল্প এলাকার পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন গ্রামে স্থানীয়রা জানান, অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা কলকারখানার দূষিত বর্জ্য সুতাং নদীতে ফেলা হচ্ছে।
এখানে গড়ে উঠা অধিকাংশ শিল্প প্রতিষ্ঠানে নেই প্রয়োজনীয় বর্জ্য শোধনাগার (ইটিপি)। যেসব কোম্পানিতে ইটিপি রয়েছে সেগুলো অতিরিক্ত খরচের ভয়ে নিয়মিত চালানো হচ্ছে না।
সরকার ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে দেখাতে অনেক কোম্পানি ইটিপি স্থাপন করেছে। কিন্তু এগুলো বন্ধ রেখে কারখানার বর্জ্য ফেলা হচ্ছে সুতাং নদীতে। অথচ শিল্প কারখানাতে ইটিপি ব্যবহার বাধ্যতামুলক।
রহস্যজনক কারণে পরিবেশ অধিদপ্তরের দায়িত্বশীলরা এসব দেখেও না দেখার ভান করে আছেন।
ফলে নদীর তীরবর্তী সদর উপজেলার নুরপুর, রাজিউড়া, ফান্দ্রাইল, সানাবই, উচাইল, বেকিটেকা, নাজিরপুর, লুকড়া, লাখাই উপজেলার করাব, বুল্লা, বেগুনাই, বরগান্দিসহ বেশকয়েকটি গ্রামগুলোতে কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও দৈনন্দিন জীবনে ব্যাপক বিপর্যয়ের পাশাপাশি উদ্বেগজনক মানবিক সঙ্কটের সৃষ্টি হয়েছে।
কলকারখানার দূষিত বর্জ্য নদীতে ফেলার কারণে সুতাং নদীর পানি কালো হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।সরজমিনে দেখা যায়, বর্ষার পানি শুকাইতেই ময়লাযুক্ত কালো কুচকুচে পানি প্রবাহিত হচ্ছে, আর এই সুতাং নদীর পানি দুষণে সব চেয়ে বেশী ভূমিকায় রয়েছে প্রাণ (আরএফএল) ও স্কয়ার কোম্পানীর একাধিক প্রতিষ্ঠান। তারা অলিপুর এলাকায় বিশাল আয়তন নিয়ে একাধিক শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছেন।
এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য সুতাং নদীতে ফেলা হচ্ছে। বিষাক্ত বর্জ্য মারাত্মক দূষণে পানি বিষাক্ত হয়ে মরে যাচ্ছে নদীর মাছ। এতে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন স্থানীয় কয়েক হাজার জেলে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপার) হবিগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, কৃষি, মৎস্যসম্পদ, গবাদি পশু ও জনস্বাস্থ্য রক্ষায় বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) স্থানীয়দের নিয়ে বেশ কয়েকবার আন্দোলন করা হয়েছে।
কিন্তু দেশে শিল্পপতিদের প্রভাব অনেক বেশী। সরকার ও রাজনীতিবিদরা তাদের উর নির্ভরশীল হওয়ায় কোন ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব হয়নি।
Leave a Reply