সৈয়দ মুনিরুল হক নোবেল :
তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আগামী সপ্তাহে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলে গণমাধ্যম কমিশন গঠন করা হবে।
সোমবার চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের উদ্যোগে সংবাদপত্রের প্রকাশক, সম্পাদক, নির্বাহী সম্পাদকসহ অন্যান্য অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম। তথ্য ভবনের মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন, চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম মোহাম্মদ শামসুদ্দিন।
সাম্প্রতিক বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন প্রসঙ্গে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা বলেন, এই আন্দোলনে গণমাধ্যম, বিশেষ করে প্রিন্ট মিডিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তবে যারা ফ্যাসিবাদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, তারা যেই হোক-কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী, সাংবাদিক তাদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি অবিচার বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, কোনো সাংবাদিকের বিরুদ্ধে যদি মিথ্যা হয়রানি, হত্যা, প্রতিহিংসামূলক মামলা হয়ে থাকে, তাহলে তা প্রত্যাহার করা হবে। তিনি বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে কাজে লাগিয়ে কেউ যেন ফ্যাসিবাদের পক্ষে কথা না বলেন, সে বিষয়ে তিনি সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান জানান।
মতবিনিময় সভায় মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, সংবাদপত্রের সমস্যার সমাধান করতে চাইলে কমিশনের কোনো বিকল্প নেই।
যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলম বলেন, খুব কষ্টের মধ্যে আছে গণমাধ্যম। বিশেষ করে করোনাকাল থেকে এর যাত্রা শুরু। প্রচারসংখ্যা, বিজ্ঞাপন ভাটির দিকে। সবাই মিলে গণমাধ্যমের জন্য একটি নীতিমালা করতে হবে।
কালের কণ্ঠ সম্পাদক হাসান হাফিজ বলেন, সংস্কার শুধু রাজনৈতিক ক্ষেত্রে করলে হবে না, এই চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরও অনেক প্রশ্নবিদ্ধ। এখানেও অনেক কারচুপি, প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগ আছে। এখানেও সংস্কার করতে হবে। ডিএফপি থেকে করা প্রচারসংখ্যা নিয়ে অভিযোগ করেন হাসান হাফিজ। তিনি এসব অনিয়ম দূর করার দাবি জানান।
প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ বলেন, সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমেও বুনিয়াদি সংস্কার দরকার। সাইবার নিরাপত্তা আইনসহ সাংবাদিকতা বাধাগ্রস্ত করে, এমন আইনগুলোও সংস্কার করা উচিত। সংবাদপত্রের প্রচারসংখ্যার ক্ষেত্রেও স্বচ্ছতা আনা দরকার। কমিশন করে অংশীজনদের সঙ্গে বসে কথা বললে কাজের কাজ হবে বলে মত দেন সাজ্জাদ শরিফ।
সভায় প্রধান তথ্য অফিসার মো. নিজামূল কবীর বলেন, ক্রোড়পত্রের বকেয়া বিল দ্রুত পরিশোধ করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণের জন্য তিনি তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
সভাপতির বক্তৃতায় চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মিডিয়া তালিকাভুক্তি, সংবাদপত্রের নিরীক্ষা, বিজ্ঞাপন ও ক্রোড়পত্র ব্যবস্থাপনায় বিদ্যমান সমস্যা উল্লেখ করেন এবং সমস্যা থেকে উত্তরণে করণীয় বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। তিনি ক্রোড়পত্র খাতে ৭৫ কোটি ৩৮ লাখ টাকার বকেয়া বিল দ্রুত পরিশোধের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে সংবাদপত্রের প্রকাশক, সম্পাদক ও নির্বাহী সম্পাদকরা প্রচারসংখ্যা নির্ধারণ, সংবাদপত্রের নিরীক্ষা, বিজ্ঞাপন ও ক্রোড়পত্র ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন অসংগতির কথা উল্লেখ করেন। তারা সংবাদপত্র সুনির্দিষ্ট নীতিমালার আওতায় আনার জন্য মিডিয়া কমিশন গঠনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সভায় আরও বক্তব্য দেন ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, দেশ রূপান্তর সম্পাদক মোস্তফা মামুন, ডেইলি সানের সম্পাদক রেজাউল করিম লোটাস, নওরোজ সম্পাদক শামসুল হক দূররানী, দৈনিক আমাদের বাংলার সম্পাদক মিজানুর রহমান চৌধুরী, নয়া দিগন্তের সালাউদ্দিন বাবর, ইনকিলাবের নির্বাহী সম্পাদক ফাহিমা বাহাউদ্দিন, ইত্তেফাকের বার্তা সম্পাদক অশোক কুমার সিংহ, গণযোগাযোগ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আকতার হোসেন, বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক মো. মাহবুবুল আলম, বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম আবদুল্লাহ প্রমুখ।
সভায় উপস্থিতদের মধ্যে ছিলেন-কালবেলা সম্পাদক সন্তোষ শর্মা, সাংবাদিক শাহনেওয়াজ করিম ও মফিজুর রহমান বাবু, জামালপুরের একমাত্র নিয়মিত প্রকাশিত দৈনিক সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ রাশেদুর রহমান রাসেল, বার্তা সম্পাদক সৈয়দ মুনিরুল হক নোবেল, চীফ ফটোগ্রাফার শাহাবুল আকন্দ প্রমুখ। মতবিনিময় সভা শেষে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ড ও বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট পরিদর্শন করেন।
Design & Developed BY: ServerSold.com
https://writingbachelorthesis.com
Leave a Reply