
হুমায়ুন কবির(ঠাকুরগাঁও)প্রতিনিধি:
প্রতি বছরের ন্যায় এবারও
ঠাকুরগাঁওয়ে বুড়িবাঁধে ঐতিহ্যবহনকারী মাছ ধরার মহোৎসবে ছুটে এসেছে তিন জেলার হাজারো মানুষ। হাতে জাল, খৈলসা আর ছোট নৌকা। কেউ ভেলায়, কেউবা পানিতে কোমরজল ডুবে জাল ফেলছেন সারি বেঁধে। যেন নদীর বুকে উৎসবের ঢেউ। শনিবার ১৮ অক্টোবর ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সুক নদীর বুড়ি বাঁধে ক’দিন ধরে চলে ঐতিহ্যবাহী মাছ ধরার উৎসব। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এদিন সকালে বাঁধের জল-কপাট খুলে দেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। এরপর থেকেই নদীর দুই পাড়ে জমে ওঠে মানুষের ঢল। কেউ মাছ ধরছেন, কেউ কিনছেন, কেউবা শুধু দেখতে এসেছেন এই অনন্য উৎসবের রঙে নিজেকে আনন্দে ভিজিয়ে নিচ্ছেন সবাই।
প্রতিদিন বাঁধের পানিতে নেমে পড়েন শত শত মানুষ। হাতে জাল, খইলসা ও ছোট ছোট নৌকা নিয়ে চলে এক প্রতিযোগিতা। রাতভর চলে মাছ ধরা— ভোর হতেই ধরা মাছ নিয়ে ডাঙায় ফিরতে থাকেন শিকারিরা। উৎসবের

চারপাশে তখন ভেসে আসে হাসি-আনন্দের সুর। সদরের আকচা ও চিলারং ইউনিয়নের সংযোগস্থলে অবস্থিত বুড়ি বাঁধ, যা দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয়দের ঐতিহ্যের অংশ হয়ে আছে। প্রতি বছর বাংলা কার্তিক মাসের শুরুতে বাঁধের জলকপাট খুলে দেওয়া হয়, আর এ সময় আশপাশের এলাকা থেকে হাজারো মানুষ ছুটে আসেন মাছ ধরতে ও দেখতে। তিন থেকে চার দিনব্যাপী এই উৎসবে নদীজুড়ে ধরা পড়ে দেশীয় প্রজাতির নানা মাছ— টাকি, পুঁটি, মলা, ফলি, শিং, শোল, টেংরা— যা ভালো দামে বিক্রি হয় বাঁধপাড়ের অস্থায়ী বাজারে। স্থানীয়দের দাবি, আগের মতো এখন আর তেমন বড় বড় মাছ মেলে না। একজন স্থানীয় মৎস্যজীবী বলেন, আগে রিং জাল দিয়ে অনেকে আগেভাগেই মাছ ধরে ফেলত, তাই এখন মাছ কিছুটা কমে গেছে। কিন্তু তবুও এই উৎসবটাই আমাদের আনন্দের জায়গা, সবাই মিলে একসঙ্গে মাছ ধরা, হাসি-আনন্দ ভাগাভাগি করা যায়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথা মতে, ১৯৫২ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড ২ হাজার ৩৮৮ হেক্টর জমির ওপর নির্মাণ করে বুড়ি বাঁধটি, যা পরবর্তীতে ১৯৭৮ সালে সংস্কার করা হয়। চলতি বছর বাঁধটির মাধ্যমে প্রায় ১ হাজার হেক্টর উঁচু জমির আমন ধানের সেচের চাহিদা পূরণ করা হয়েছে,যা ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষি অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। স্থানীয়রা জানান, এই উৎসব শুধু মাছ ধরার নয়, এটি এখন পরিণত হয়েছে একটি সামাজিক মিলনমেলায়। ঠাকুরগাঁও ছাড়াও

পাশের দিনাজপুর, পঞ্চগড় ও রংপুর থেকেও মানুষ আসেন এই উৎসবে যোগ দিতে। পুরো এলাকা তখন পরিণত হয় এক আনন্দমুখর পানি-জাল ও মাছের মিলনমেলায়।
কেউ জাল ফেলছে, কেউ মাছের দর হাঁকছে, কেউবা পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছে প্রকৃতির কোলে। এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. খাইরুল ইসলাম বলেন, আমরা বুড়ি বাঁধে দেশীয় প্রজাতির মাছ সংরক্ষণে কাজ করছি। এ বছর একাধিকবার অভিযান চালিয়ে রিং জাল ধ্বংস করা হয়েছে। আগামীতে যেন আরও বেশি মাছ পাওয়া যায় সে বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মানুষ এখন বিনোদনের জায়গা খুঁজে পায় না, তাই এই বাঁধের উৎসব তাদের আনন্দের এক কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।
Leave a Reply