সবুজ শিকদার, জেলা প্রতিনিধি বাগেরহাট।
বাগেরহাটের চিতলমারীতে শত কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে রেনেসাঁ এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানের মালিক বাবা-ছেলেকে খুজে না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পেড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। টাকা ফেরত পেতে আইনগত সহায়তা চেয়ে আবেদন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে। মানববন্ধন, মিছিল ও সমাবেশও করেছেন ক্ষতিগ্রস্থ গ্রাহকরা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলছে অনিবন্ধিত এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে খোজ খবর নিয়ে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
খোজ নিয়ে জানা যায়, ২৪ বছর আগে ধর্মগুরু বাবা বিজয় গোসাঁই’র সুনামকে পুঁজি করে তাঁর ছেলে আনন্দ মোহন বিশ্বাস বাগেরহাট সদরের হালিশহর গ্রামে গড়ে তোলেন ‘জ্ঞান বিজয় সেবাশ্রম’। এই সেবাশ্রমের ব্যানারে আনন্দ মোহন বিশ্বাস‘রেনেসাঁএন্টারপ্রাইজনামে বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলায় আরেকটি প্রতিষ্ঠান খোলেন। এই প্রতিষ্ঠানে ৬ বছরের দ্বিগুন লাভ দেওয়ার কথা বলে ফিক্সড ডিপোজিট, ডিপিএস, সঞ্চয় গ্রহণ, মাসিক মুনফা স্কীমসহ বিভিন্ন প্রলোভনে অত্র এলাকার মানুষের কাছ থেকে নগদ টাকা নেওয়া শুরু করেন। সম্প্রতি গ্রাহকরা টাকা উত্তোলন করতে গিয়ে দেখেন অফিসের গেটে তালা ঝুলছে। গ্রাহকরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন আনন্দ মোহন বিশ্বাস ও তার ছেলে প্রবীর বিশ্বাস ওরফে তারক গ্রাহকদের কমপক্ষে শতকোটি টাকা নিয়ে পালিয়েছন।
তারা গাঢাকা দিলেও মাঠে রেখে গেছেন শক্তিশালী তাবেদার গ্রুপ। এখন এই তাবেদারেরা গ্রাহকদের নানা ধরনের হুমকি-ধামকি দিচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্থ গ্রাহকেরা এই বিষয়ে বিচার চেয়ে ও টাকা ফেরতের দাবিতে একাধিক দপ্তরে লিখিত অভিযোগ,
মানববন্ধন, মাইকিং ও সভা-সমাবেশ করেও ‘রেনেসাঁ এন্টারপ্রাইজ’র কাছ থেকে টাকা ফেরত পাচ্ছে না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে ভূক্তভোগী বিকাশ বালা, লিপি মন্ডল, হাসি রায়, উত্তম হালদার, ইতি রানী হুই ও লিপি পোদ্দারের করা অভিযোগের পর এ সব তথ্য উঠে এসেছে।
ভূক্তভোগীদের অভিযোগ, প্রয়াত ধর্মগুরু বিজয় গোসাঁইয়ের প্রতি হিন্দুদের ভক্তি ও বিশ্বাসের সুযোগটিকে কাজে লাগিয়েছেন আনন্দ মোহন বিশ্বাস ও তার ছেলে প্রবীর বিশ্বাস ওরফে তারক।
ভূক্তভোগী খড়মখালী গ্রামের বিকাশ বালা বলেন,‘বিজয় বিশ্বাস এতদাঞ্চলের একজন সনাতন ধর্মের গুরু। এ অঞ্চল ছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তার অসংখ্য ভক্তবৃন্দ রয়েছেন। এটাকে পুঁজি করে তার ছেলে আনন্দ মোহন বিশ্বাস জ্ঞান বিজয় সেবাশ্রমের ব্যানারে চিতলমারী উপজেলা সদরের দুর্গাপুর নামক স্থানে রেনেসাঁ এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান খোলেন। এই প্রতিষ্ঠানে ৬ বছরের দ্বিগুন দেবার কথা বলে ফিক্সড, ডিপিএস, সঞ্চয় গ্রহণ, মাসিক মুনফা স্কীমসহ বিভিন্ন প্রলোভনে আশ্বাস দিয়ে অত্র এলাকার ও সেবাশ্রম ভক্তদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া শুরু করে। তাদের লোভনীয় প্রলভোনে এবং ধর্মীয় বিশ্বাসে আমি
মাসিকলাভ হিসেবে প্রতি লাখে মাসে ১ হাজার ২০০ টাকা হিসেবে ১০ লাখ টাকা ডিপিএস করি। তারা প্রতারনার মাধ্যমে আমার
টাকা আত্মসাৎ করেছে। এখন অফিসে তালা দেওয়া রয়েছে। টাকা চাইতে গেলে তাদের তাবেদার বাহিনীর লোকজন গালিগালাজসহ নানা ধরনের হুমকি দিচ্ছে।
বিকাশ বালা আরও বলেন, আনন্দ মোহন বিশ্বাস ও তার ছেলে প্রবীর বিশ্বাস ওরফে তারক কমপক্ষে একশ কোটি টাকা নিয়ে পালিয়েছে। এখন টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য অত্র অঞ্চলের শতশত গ্রাহক সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ, মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল, মাইকিং ও সভাসমাবেশ করছে। তবুও টাকা ফেরত পাওয়া যাচ্ছে না। এ জন্য তিনি টাকা ফেরতের দাবিতে গত সোমবার (২ ডিসেম্বর) ইউএনও’র কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
ভূক্তভোগী কাননচক গ্রামের দিনমজুর হাসি রায় বলেন,‘আমি বিধবা নারী। আমার একটি ছেলে ও একটি মেয়ে। মেয়েটি নাসিং পড়াশুনা করে। সে জন্য বহু কষ্টে আনন্দ মোহন বিশ্বাসের শ্যালক সুশাংশু শেখর সদাই আমার পূর্ব পরিচিত হওয়ায় রেনেসাঁ এন্টারপ্রাইজে টাকা জমা রাখতে বলেন। আমি টাকা না রাখতে চাইলে সদাই বলে আপনার টাকা লাভসহ তিনি ফেরত দেবেন। তার প্রলোভনে আমি ৬ বছরে ডাবলের একটি হিসেবে ২ লাখ টাকা, আমার মেয়ে দিপা রায়ের নামের সঞ্চয়ী হিসেবে ৮ হাজার ৫০০ টাকা ও ছেলে সুজন রায়ের নামে সঞ্চয়ী হিসেবে ৮ হাজার ৫০০ টাকা জমা রাখি। এখন দেখি অফিসে তালা। আর সুধাংশু শেখর সদাইয়ের কাছে গেলে সে আমাকে টাকা না দেওয়ার জন্য নানা তাল বাহানা করছে। এখন টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য রোববার(১ ডিসেম্বর) ইউএনও স্যারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি।’
কাননচক গ্রামের লিপি মন্ডল বলেন,‘রেনেসাঁ এন্টারপ্রাইজের মালিক আনন্দ মোহন বিশ্বাস। শ্যালক সুশাংশু শেখর সদাইয়ের কথামত মাসে প্রতি লাখে ১ এক হাজার ২০০ টাকা হিসেবে ৪ লাখ ৭ হাজার টাকা ফিক্সডিপোজিট করি। ৬ বছরে ডাবলের আরও একটি হিসেবে ২০ হাজার টাকা জমা রাখি। আমার বাবা অনাদী মন্ডল জায়গা বিক্রি করে তার নামে ৬ বছরে ডাবলের আরও একটি হিসেবে দেড় লাখ টাকা জমা রাখে। আমার মেয়ে তিষা মন্ডলের নামের সঞ্চয়ী হিসেবে ৮ হাজার ৫০০ টাকা ও আমার ছেলে পল্লব মন্ডলের নামে সঞ্চয়ী হিসেবে ১৭ হাজার টাকা জমা করি। আমার পরিবারের মোট ৬ লাখ ৬ হাজার ৫০০ টাকাসহ শতশত মানুষের আনন্দ মোহন বিশ্বাস ও তার ছেলে কমপক্ষে শতকাটি টাকা নিয়ে পালিয়েছে। এখন টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য আমি রোববার (১ ডিসেম্বর) ইউএনও স্যারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি।’
খড়মখালী গ্রামের উত্তম হালদার ও লিপি পোদ্দার বলেন,‘এতদাঞ্চলের শতশত গ্রাহকের টাকা রেনেসাঁ এন্টারপ্রাইজের মালিক আনন্দ মোহন বিশ্বাস মেরে দিয়েছে। আমরা গত ১৪ জুলাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছিলাম কিন্তু আজও কোন খোঁজখবর পেলাম না। আমরা চাই আনন্দ মোহন ও প্রবীর বিশ্বাসকে আইনের আওতায় এনে গ্রাহকদের টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করা হোক।
রেনেসাঁ এন্টারপ্রাইজের মাঠকর্মী সুধাংশু শেখর সদাই প্রশান্ত ও সত্যজিৎ মন্ডল বলেন, ‘আমার প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারী হিসেবে কাজ করেছি। প্রতিষ্ঠানের কয়েশ গ্রাহক রয়েছে। মালিকপক্ষ গাঢাকা দিয়েছেন। গ্রাহকদের জমাকৃত টাকা ফেরত না দেওয়ায় আমরাও বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছি।
এ ব্যাপারে জানতে রেনেসাঁ এন্টারপ্রাইজের পরিচালক আনন্দ মোহন বিশ্বাসের মুঠোফোনে ফোন দিলে তিনি তা রিসিভ করেননি।
অপরদিকে রেনেসাঁ এন্টারপ্রাইজের বিজনেস অপারেশন ম্যানেজার প্রবীর বিশ্বাস ওরফে তারকের মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাপস পাল বলেন, বিষয়টি আমরা শুনেছি। অভিযোগ গুলো ক্ষতিয়ে দেখে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
Design & Developed BY: ServerSold.com
https://writingbachelorthesis.com
Leave a Reply